ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাককর্মী দীপু চন্দ্র দাসকে গাছে ঝুলিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা এবং লক্ষ্মীপুরে ঘরে আগুন দিয়ে এক শিশুকন্যা হত্যার ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মানবাধিকার সুরক্ষা ও আইনের শাসন নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আজ রোববার এক সংবাদ বিবৃতিতে ওই দুই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এমন মন্তব্য করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
এ ধরনের নৃশংস সহিংসতা আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ থাকছে না বলে আসক মনে করে। সংগঠনটি বলেছে, বারবার এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রমাণ করে যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত না হওয়ায় একধরনের দায়মুক্তির সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, কেবল ঘটনার পর আটক বা গ্রেপ্তার করলেই রাষ্ট্রের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের পাশাপাশি উসকানিদাতা, পরিকল্পনাকারী ও সংঘবদ্ধ সহিংসতায় মদদদাতাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনার পেছনে থাকা প্রশাসনিক ব্যর্থতার বিষয়গুলোও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ময়মনসিংহের ভালুকায় কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পাইওনিয়ার্স নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার কর্মী দীপু চন্দ্র দাসকে গত ১৮ ডিসেম্বর পরিকল্পিত মব তৈরি করে সংঘবদ্ধভাবে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁর মরদেহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকের একটি গাছে বিবস্ত্র অবস্থায় ঝুলিয়ে রেখে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এই নৃশংসতা সংবিধানে দেওয়া আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার ও জীবনের অধিকারের চরম লঙ্ঘন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, একই সঙ্গে সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীরই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কোনো অধিকার নেই। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ থাকলে তা তদন্ত ও বিচার করার দায়িত্ব একমাত্র আদালতের; মব তৈরি করে শাস্তি দেওয়ার সংস্কৃতি সম্পূর্ণ বেআইনি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, লক্ষ্মীপুর জেলায় ১৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা তালা লাগিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ঘরের ভেতরে থাকা সাত বছর বয়সী এক শিশুকন্যা দগ্ধ হয়ে নিহত হয়। এই ঘটনা রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি শিশু অধিকার ও মানবিকতার চরম লঙ্ঘনের এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। একটি শিশুকে এভাবে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা শুধু ফৌজদারি অপরাধ নয়, এটি বর্তমান সময়ে নিরাপত্তাসক্ষমতার দুর্বলতা মনে করিয়ে দেয়।
এসব ঘটনা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে বলে দৃঢ়ভাবে মনে করে আসক। সংগঠনটি বলেছে, রাষ্ট্র যদি এখনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সময়ক্ষেপণ করে, তবে এ ধরনের সহিংসতা সমাজে আরও গভীরভাবে প্রোথিত হবে, যার দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না।