
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন।
আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। এমন সময় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, যখন অধ্যাপক ইমতিয়াজের ১৪ বছর আগে লেখা একটি বইয়ে ‘ইতিহাস বিকৃতির’ অভিযোগে তদন্ত চলছে। তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইমতিয়াজ আহমেদ নিজেই অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন। তাই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আগেই তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ৬ এপ্রিল তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) গেছেন। এ জন্য সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ৩ এপ্রিল তিনি উপাচার্যের কাছে আবেদন করেন।
গত ২৯ মার্চ একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কলামে সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালে প্রকাশিত ইমতিয়াজের ‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড: স্টেট ভার্সেস পারসন’ শীর্ষক বইয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ২ এপ্রিল ইমতিয়াজ আহমেদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ এবং একটি উচ্চক্ষমতার তদন্ত কমিটি গঠন করে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীও সেখানে যোগ দেন।
এরপর ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ৩ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির পরিচালক ফকরুল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ৬ এপ্রিল উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ৭ এপ্রিল এক বিবৃতিতে অভিযোগ তদন্ত করে অধ্যাপক ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ২ এপ্রিল রাতে বিবৃতি দেন ইমতিয়াজ আহমেদ। সেখানে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের অভিযোগ ওঠায় তিনি আশ্চর্য হয়েছেন। যে বইটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সংঘটিত জেনোসাইডের বিচার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টার প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়ে রচিত, তাতে ১৯৭১ সালের জেনোসাইডকেই অস্বীকার কিংবা এর গুরুত্ব কমিয়ে দেখানো কীভাবে সম্ভব? তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের অভিযোগ ওঠায় আমি আশ্চর্য হয়েছি৷ আমি মনে করি, কোথাও বইয়ের কোনো কোনো অংশ বুঝতে ভুল হয়েছে কিংবা ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে৷’