অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল

আইনজীবী পরিবর্তনে ভুক্তভোগীদের ভোগান্তির অবসান চান আইন উপদেষ্টা

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘প্রত্যেক পেশার স্বচ্ছতার প্রয়োজন আছে। কিছু আইনজীবীর বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ মাঝেমধ্যেই শুনি যে ওনারা মামলা ঠিকমতো পরিচালনা করেন না। সে ক্ষেত্রে আইনজীবী পরিবর্তন করতে গেলে ভুক্তভোগীদের অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। কিছু আইনজীবীর জন্য সমস্ত আইনজীবীর দুর্নাম হয়। এমন দেশ আমরা দেখতে চাই না।’

সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের রেস্টহাউস ও ক্যাফেটেরিয়া উদ্বোধন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা এ কথাগুলো বলেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. রুহুল কুদ্দুস কাজলের সঞ্চালনায় বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, হাউস কমিটির চেয়ারম্যান মো. মহসিন মিয়া, ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান এ এস এম বদরুল আনোয়ার, লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন, আইন সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান আইনজীবী কাজী এনায়েত হোসেন, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘ছাত্র–জনতার অসাধারণ আত্মত্যাগের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ আমরা পেয়েছি, সেটি যেন সব সেক্টরেই হয়। যেসব আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, বার কাউন্সিল যেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। বর্তমান বার কাউন্সিলের নেতৃত্বে আইন পেশায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ফিরে এলে সবচেয়ে বেশি খুশি হব। গত আমলে দেখেছি কিছু আইনজীবী কী ভূমিকা রেখেছেন।’

আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আইন কোর্স আছে। কিন্তু সব জায়গায় মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া হয় না। বার কাউন্সিলের পরীক্ষা নিয়ে আগে অনেক অভিযোগ শুনতাম। আইনজীবীদের তালিকাভুক্তির পরীক্ষা, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মূল্যায়ন নিয়ে আরও কাজ করা প্রয়োজন। এটি করতে পারলে আইন পেশায় আইন দক্ষতা বাড়বে।’

অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘বাংলাদেশে সাড়ে ১৫ বছর আইনের শাসন ছিল না। বিচার পেতে মজলুমরা এক দরজা থেকে আরেক দরজায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। আইনের শাসন পায় নাই। সেই অবস্থা থেকে ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নতুন করে মুক্ত হয়। আশা করব বর্তমান বিচারব্যবস্থা জনগণের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে।’

আদিলুর রহমান খান আরও বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন আইনজীবীরা। আর বাংলাদেশ বার কাউন্সিল হলো স্বাধীন ও যোগ্য আইনজীবী তৈরির সেই জায়গা। বার কাউন্সিল আইনজীবীদের স্বাধীন ও মানুষকে ন্যায়বিচার দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিলর চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বার কাউন্সিলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আইনজীবীদের মান বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছি। বার কাউন্সিলের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। প্রথমবারের মতো এবারই প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজবের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা বার কাউন্সিলকে বাংলাদেশের আইনজীবীদের তীর্থস্থানে রূপান্তর করতে চাই। আর সে কারণেই আইনজীবীদের গুণগত মান বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছি। আইনজীবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য বার কাউন্সিল আইনের আওতায় ইতিমধ্যে পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ এলেই দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।’

পরে আইনজীবীদের পক্ষে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের কাছে দুটি দাবি তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। দাবিগুলো হলো আইনজীবীদের জন্য পূর্বাচল বা অন্য কোনো স্থানে আবাসিক এলাকা তৈরি করা এবং আইনজীবীদের জন্য কক্সবাজারে প্রশিক্ষণ ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট করা।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সারা বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৮০ হাজার আইনজীবী আছেন। যাঁদের অনেকেই ঢাকা শহরে আসার পর থাকার জায়গা খুব বেশি থাকে না। বার কাউন্সিলের নতুন রেস্টহাউসে এসে তাঁরা স্বল্প খরচে থাকতে পারবেন।