
দেশের একমাত্র সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) নিয়ে এক শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, কোম্পানি কি এমপি ইলেকশন করবে—যে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে?
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ প্রশ্ন রাখেন।
শুনানি নিয়ে আদালত এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড থেকে ৪৭৭ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আইন ও বিধি অনুসারে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দ্রুত অনুসন্ধান শেষ করতে বলেছেন। আদালত বলেছেন, অনুসন্ধানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়ায় দুদকের স্বাধীনতা থাকবে। এ–সংক্রান্ত স্বতঃপ্রণোদিত রুল নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া অনুসন্ধান শেষে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়েছে।
‘দুর্নীতির আখড়া এসেনশিয়াল ড্রাগস: সরকারি অডিটে ৩২ অনিয়ম, ৪৭৭ কোটি টাকা লোপাট’ শিরোনামে একটি দৈনিকে গত ১২ মার্চ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি নজরে এলে সেদিন আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুল দিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধান করতে দুদককে নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আদেশের জন্য আজ আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে।
এর আগে অভিযোগ অনুসন্ধান কার্যক্রম বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। প্রতিবেদন বলা হয়, রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমেটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বক্তব্য দিতে নোটিশ পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যান্য অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সাক্ষীদের বক্তব্য গ্রহণ, পরীক্ষা, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ ও অনুসন্ধান প্রতিবেদন তৈরির কার্যক্রম চলমান। প্রকৃত অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরণের জন্য আরও সময় প্রয়োজন। অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আরও সময় প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
আদালতে এসেনশিয়াল ড্রাগস ও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী কাজী আখতার হামিদ, মোতাহার হোসেন সাজু, জহুরুল ইসলাম ও মো. আবদুন নূর। দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।
শুনানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাহার হোসেন বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। দেশের একমাত্র সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইডিসিএল। প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওই (একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন) প্রকাশ করা হয়েছে। তখন আদালত বলেন, কোম্পানি কি এমপি ইলেকশন করবে যে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে? তখন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাহার হোসেন বলেন, দেশের সুনাম জড়িত। অপর আইনজীবী জহুরুল ইসলাম বলেন, নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষ আছে। নিরীক্ষা এখনো চলমান।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি অডিটেই আর্থিক বড় দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদনে ৩২টি গুরুতর অনিয়মে সরকারি ৪৭৭ কোটি ৪১ লাখ ৯১ হাজার ৩৭৮ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষায় যেসব অনিয়ম ধরা পড়েছে, তার মধ্যে আছে নিয়োগ–বাণিজ্য, টেন্ডার–বাণিজ্য, ব্যবহৃত কাঁচামালের চেয়ে ওষুধ উৎপাদন কম দেখানো, উৎপাদিত ওষুধে সঠিক মাত্রায় কাঁচামাল ব্যবহার না করে গুণগত মানের ওষুধ উৎপাদন না করা, কনডম প্রস্তুতে কাঁচামালের ঘাটতি, বনভোজনের নামে ভ্রমণ ভাতা, করোনাকালে ক্যানটিন বন্ধ থাকলেও প্রাপ্যতা না হওয়া সত্ত্বেও কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিকদের অনিয়মিতভাবে ক্যানটিনে ভর্তুকি দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ।