ভোলা থেকে নাতনিকে নিয়ে মেট্রোয় চড়তে এসেছেন তিনি

দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এসেছেন মেট্রোরেল দেখতে
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ভোলা থেকে চার বছর বয়সী নাতনিকে নিয়ে গতকাল শুক্রবার ঢাকায় এসেছেন মোহাম্মদ মোজতবা। ষাটোর্ধ্ব এই প্রবীণের ঢাকায় আসার উদ্দেশ্য দেশের প্রথম মেট্রোরেলে ভ্রমণ।

আরেক নাতিকে নিয়ে আজ শনিবার সকালেই চলে আসেন আগারগাঁও স্টেশনে। উত্তরার দিয়াবাড়ি পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরতি টিকিট কাটছিলেন।

মোজতবার মতো আজ সকাল থেকে অনেকেই আসছিলেন দেশের প্রথম মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে। ছুটির দিনে পরিবার-স্বজনদের নিয়ে তাঁরা ভিড় করেন আগারগাঁও ও উত্তরা স্টেশনের প্রবেশমুখে। টিকিট বিক্রির মেশিন ও টিকিট বিক্রির কাউন্টার—দুদিকেই যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় স্টেশনে প্রবেশের ফটক বন্ধ করে দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অনেকেই স্টেশনে ঢুকতে না পেরে ফিরে যান।

নাতনিকে নিয়ে মেট্রো রেলে চড়তে এসেছেন মোহাম্মদ মোজতবা

নাতি সাগরকে টিকিট কাটতে দিয়ে নাতনি মুক্তাকে নিয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদ মোজতবা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে নতুন একটা জিনিস আসছে। মনে হইল দেখা দরকার। নাতি-নাতনিদের নিয়ে এলাম। শখ পূরণ হইল।’

স্কুল ছুটি থাকায় অনেকেই ঢাকায় স্বজনদের বাসায় বেড়াতে এসেছেন। বাড়ি ফেরার আগে তাঁদের অনেকেই এসেছেন মেট্রোরেলে চড়তে। ফেনীর ফুলগাজী সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাঈফুল ইসলাম এসেছিলেন সন্তান ও ভাতিজিদের নিয়ে। তিনি বলেন, ‘গতকাল সবাইকে নিয়ে এসেছিলাম। ১২টা বেজে যাওয়ায় স্টেশনে ঢুকতে পারিনি। আজকে সকাল সকাল এসে ঘুরে গেলাম।’

গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। তবে কর্মব্যস্ততাসহ নানা কারণে অনেকেই প্রথম দিন মেট্রোরেলে চড়তে পারেননি। তাই গতকাল শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে মেট্রোরেলে চড়তে নানা শ্রেণি-পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ উত্তরার দিয়াবাড়ি ও আগারগাঁও স্টেশনে ভিড় করেন।

টিকিট কাউন্টারের পাশাপাশি যাত্রীরা টিকিট ভেন্ডিং মেশিন (টিভিএম) থেকেও টিকিট কিনতে পারছিলেন। টিকিটের সমপরিমাণ টাকা দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকিট কেনায় অনেকেই আগ্রহী ছিলেন। তাই টিভিএমের লাইনও ছিল বেশ লম্বা।

দোতলার কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে যাত্রীরা উঠে যান তৃতীয় তলায়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায় ট্রেনের দরজা। যাত্রীরা একে একে ওঠেন ট্রেনে। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে ট্রেন ছাড়ে আগারগাঁও স্টেশন থেকে। যাত্রীদের কেউ বসেন, কেউ ঘুরে ঘুরে দেখেন। ট্রেন চলতে শুরু করতেই উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা। কেউ সেলফি তুলছিলেন, কেউ বাইরের দৃশ্য ধারণ করছিলেন। কেউ কেউ ভিডিও কলে প্রিয়জনকে মেট্রোরেলের ভেতরের দৃশ্যও দেখান।

রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে স্ত্রীকে নিয়ে মেট্রোরেলে চড়তে আসেন বদরুদ্দোজা আরজু। তিনি বলেন, এত দিন বাড়ির সামনে কাজ চলতে দেখেছি। কবে চালু হবে, অপেক্ষায় ছিলাম। দ্রুত মতিঝিল পর্যন্ত চালু হলে আরও সুফল পাওয়া যাবে।
যাত্রা শুরুর ঠিক ১০ মিনিটের মাথায় ১০টা ৪ মিনিটে উত্তরা উত্তর স্টেশনে পৌঁছে যায় মেট্রোরেল। যাত্রীরা নেমে উত্তরা স্টেশন ঘুরে দেখেন। উত্তরা স্টেশনের টিকিট কাউন্টারেও দীর্ঘ লাইন। অনেকেই আবার ফিরতি টিকিট কাটেন।

মোহাম্মদপুর থেকে কয়েক বন্ধু মিলে মেট্রোরেলে চড়তে এসেছেন। তাঁদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন বিদেশের মেট্রোরেল দেখতাম। এখন নিজ দেশের মেট্রোরেলে চড়ছি। দেশ একধাপ এগিয়ে গেল।’

মেট্রো স্টেশনে ঢোকার জন্য যাত্রীদের ভিড়

মিরপুর ১৩ নম্বর থেকে ব্যবসায়ী মহিনুদ্দীন এসেছিলেন পরিবারের ছয় সদস্যকে নিয়ে। এর মধ্যে চাঁদপুরের শাহরাস্তি থেকে আসা তাঁর ভাগনে-ভাগনিরাও ছিলেন। ঢাকায় বেড়াতে এসে তাঁদের আবদার মেট্রোরেল চড়বেন। মহিনুদ্দীনের ভাগনি শারমিন পাটোয়ারী শাহরাস্তির বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলে এবার নবম শ্রেণিতে উঠেছে। শারমিন প্রথম আলোকে বলে, ‘অনেক ইচ্ছা ছিল মেট্রোরেলে উঠব। খুব ভালো লাগছে।’

স্টেশনের ডিসপ্লে বোর্ডে বিভিন্ন নির্দেশনা উঠতে থাকে। পরবর্তী তিনটি ট্রেনের যাত্রা শুরুর সময় বোর্ডে দেখায়। ১১টা ১০ মিনিটে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের উদ্দেশে ট্রেন ছাড়ে। ১১টা ১৯ মিনিটেই পৌঁছে যায় গন্তব্যে। এত অল্প সময়ে উত্তরা থেকে আসতে পেরে যাত্রীদের অনেকেই অবাক হচ্ছিলেন।

বেলা সাড়ে ১১টায় স্টেশনে প্রবেশের ফটক লাগিয়ে দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তখনো বাইরের লাইনে কয়েক শ মানুষ দাঁড়ানো। আর ভেতরের টিকিট কাউন্টারেও দীর্ঘ সারি। দেশের প্রথম মেট্রোরেল নিয়ে স্টেশন ছাড়ার সময়েও যাত্রীরা ছিলেন উচ্ছ্বসিত।