
লালন সাঁইয়ের গান নিয়ে আলোচনা আর গানে এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান হয়ে গেল। আজ শনিবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘নদীয়ার ভাবুকতার ইতিহাসে ফকির লালন শাহ, সংগীত ও তাত্ত্বিক পর্যালোচনা অনুষ্ঠান’–এর আয়োজন করেছিল বাংলা একাডেমি ও নবপ্রাণ আন্দোলন।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময় ছিল বিকেল চারটা। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তাঁর পৌঁছাতে দেরি হয়। পাঁচটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, জাতীয় পর্যায়ে লালনকে ধারণ ও উপস্থাপন করা চ্যালেঞ্জিং কাজ। এটা তিনি উপলব্ধি করেছেন জাতীয় পর্যায়ে লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে। এ ক্ষেত্রে বড় বাধাটা আসে বুদ্ধিবৃত্তিক মহল থেকে, ধর্মীয় গোষ্ঠী থেকে নয়। তবু শেষাবধি সেই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, লালন সাঁইয়ের প্রাসঙ্গিকতা ক্রমেই বাড়ছে। তাঁকে নিয়ে অনেক কাজ করার আছে। লালন সাঁইসহ আরও অনেক বিষয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কাজ করা প্রয়োজন। সেই উদ্যোগ শুরু হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধান আলোচক কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘লালন সাঁই নিজেকে কখনো বাউল বলে পরিচয় দেননি। বাউল সম্পর্কে আমাদের এখানে নেতিবাচক ধারণা প্রচার করা হয়েছে। এর কুফল আমরা ভোগ করছি। লালন সাঁইয়ের গান ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাঁর গানের ভাবের প্রতি আমরা সুবিচার করতে পারিনি।’
সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, লালন সাঁইকে দেখার জ্ঞানতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এখন অনেকটা পাল্টেছে। আগে লালনের রচনা লোকসাহিত্য হিসেবে পড়ানো হতো। এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে তাঁর রচনা কবিতা বা গীতিকবিতা হিসেবে পাড়ানো হচ্ছে। তাঁর দর্শন পশ্চিমা দার্শনিকদের মতোই জ্ঞানতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা সম্ভব।
স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব সেলিম রেজা। ধন্যবাদ জানান কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ রোমেল।
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল লালন সাঁইয়ের গানের তত্ত্ব আলোচনা ও গানের পরিবেশনা। গান পরিবেশন করেন কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া থেকে আসা নবপ্রাণ আন্দোলনের সাধক শিল্পীরা। এ পর্বের শুরুতেই নবপ্রাণ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মৎস্য ও প্রাণসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, ১৯৯৪ সালে নবপ্রাণ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল শুদ্ধ বাণী ও সুরে লালন সাঁইয়ের গানের চর্চার জন্য। লালন সাঁইয়ের গান প্রথম দিকে রেডিওতে প্রচার হতো পল্লিগীতি হিসেবে। শিল্পী আবদুল আলীম দু-একটি গান করেছেন। তবে ‘লালন সাঁইয়ের গান’ হিসেবে শিল্পী ফরিদা পারভীনই প্রথম রেডিওতে গান করেছেন। সম্প্রতি প্রয়াত শিল্পী ফরিদা পারভীনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে গানের পর্ব তাঁকে উৎসর্গ করা হয়।
‘আমি, আত্মা, পরম’, ‘দেহ, প্রকৃতি, প্রেম’ এবং ‘ভাষা, ভাব, উপলব্ধি’—এই তিনটি ভাগে ভাগ করে লালন সাঁইয়ের গানগুলো পরিবেশন করা হয়। শুরু হয়েছিল সম্মিলিত কণ্ঠে দৈন্য গান ‘গুরু মনকে আমার লও গো সুপথে’ দিয়ে। প্রতিটি গানের আগে ফরহাদ মজহার সেই গানের বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করেন। এতে শ্রোতাদের কাছে গানের মর্ম নতুন করে উপলব্ধিতে আসে।