বিদেশে উচ্চশিক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীকে অনেকগুলো ধাপ পার হতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রাম খুঁজে নেওয়া, প্রয়োজনীয় নথিপত্র জোগাড়, স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি) তৈরি, ভাষাগত দক্ষতা অর্জন এবং আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা করা।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘স্টাডি অ্যাব্রোড ফেয়ার–২০২৫’ এ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সামনে এসব বিষয়ে পরামর্শ তুলে ধরেন উচ্চশিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শকেরা। এ মেলার আয়োজন করে প্রথম আলো।
বিকেল সাড়ে চারটায় ‘আইইএলটিএস অ্যান্ড স্টাডি অ্যাব্রোড’ শীর্ষক একাডেমিক সেশনে আলোচনা করেন অনলাইন এডুকেশন কনটেন্ট ক্রিয়েটর মুনজেরিন শহীদ। শিক্ষার্থী–অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সঠিক নির্দেশনা ও পরিকল্পনা থাকলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ সহজেই পার হওয়া যায়। তবে এ জন্য একজন শিক্ষার্থীর দৃঢ় মানসিক শক্তি থাকা চাই।
মুনজেরিন শহীদ বলেন, বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নিজ কাজের ক্ষেত্র পছন্দ করলে সফলতার হার বেড়ে যায়। তবে যাঁরা ভিন্ন ক্ষেত্রে ডিগ্রি নিতে চান, সঠিক পরিকল্পনা থাকলে তাঁরাও সফল হন। এ সময় তিনি সেশনে অংশ নেওয়া উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন।
সন্ধ্যা ছয়টায় ‘স্টাডি ইন নিউজিল্যান্ড অ্যান্ড অস্ট্রেলিয়া’ শীর্ষক দিনের শেষ সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলোচক হিসেবে অংশ নেন বিডিএক্সপার্ট এডুকেশন কনসালট্যান্সির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শফিকুল ইসলাম (শিমুল), সিএইচএস এডুকেশন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী নাজমুল হাসান (রাজু), ম্যাক্সিমাস এডুকেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশনের ডেস্টিনেশন ম্যানেজার মুবারক হোসেন ভূঁইয়া, শেনজেন এডু লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল হক এবং ইউনিভার্সাল কলেজ বাংলাদেশের সভাপতি ও প্রভোস্ট প্রফেসর হিউ গিল।
এ সময় বক্তারা বিদেশে পড়াশোনার গন্তব্য হিসেবে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন সুবিধা, আর্থিক খরচের প্রস্তুতি, স্কলারশিপ অ্যাডমিশন ও ভিসাপ্রক্রিয়া, পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেন।
আমি চাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়ে আমার মেয়েকে যাতে কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়— হামিদুর রহমান, মেলায় আসা অভিভাবক
এ সেশনে অংশ নেন রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে আসা হামিদুর রহমান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা মেয়ে শিউলি আক্তার। হামিদুর রহমান বলেন, ‘আমি চাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়ে আমার মেয়েকে যাতে কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়। তা ছাড়া ভালো বিশ্ববিদ্যালয় এবং পছন্দের প্রোগ্রাম পেতে হলে অভিজ্ঞদের পরামর্শ কজে আসবে বলে মনে করি। তাই এই মেলায় আসা।’
এ ছাড়া দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত হয় ‘স্টাডি ইন ইউকে, ইউরোপ অ্যান্ড মালয়েশিয়া’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা। আলোচক হিসেবে ছিলেন ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের প্রভোস্ট চ্যান জো জিম, সিএইচএস এডুকেশন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী নাজমুল হাসান, ইউনিভার্সাল কলেজ বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক সাবিথ আহমেদ মুসা এবং ল্যাঙ্গুয়েজ সার্টের ব্যবসা উন্নয়নবিষয়ক ব্যবস্থাপক আশিকুর চৌধুরী। মডারেটর ছিলেন সাইমুম মৌসুমী।
দুই দিন ধরে চলা মেলার আজ ছিল দ্বিতীয় দিন। এতে ভিড় জমান বিদেশে পড়াশোনায় আগ্রহী শিক্ষার্থীরা, তাঁদের অভিভাবক ও তরুণ পেশাজীবীরা। ‘উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখো, বিশ্বজুড়ে’ স্লোগানে আয়োজিত মেলা চলে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। তবে অনলাইনে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত এ মেলা চলবে।
মেলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, শিক্ষা পরামর্শক ও অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায়। তাঁরা দর্শনার্থীদের বিদেশে স্কলারশিপ, ভর্তিপ্রক্রিয়া, ভিসা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন। শিক্ষার্থীদের ভিড়ে স্টলগুলো ছিল আলোচনা, কাউন্সেলিং ও তথ্যবিনিময় প্রাণবন্ত।
আয়োজকেরা জানান, মেলায় বিদেশে উচ্চশিক্ষা, ভর্তিপ্রক্রিয়া, স্কলারশিপ, ভিসা ও আবেদনসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য আছে একাধিক প্যানেল সেশন, তথ্যবহুল একাডেমিক আলোচনা ও অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ অফার।
অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও শিক্ষার্থীদের আগ্রহে বেশ সন্তুষ্ট। শেনজেন এডু লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল হক বলেন, ‘প্রথম আলো আয়োজিত এই ফেয়ারটি শিক্ষার্থীদের জন্য দারুণ একটি উদ্যোগ। যাঁরা বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের জন্য এটি এক জায়গায় সব তথ্য জানার সুযোগ তৈরি করেছে। আমরা মনে করি, এমন আয়োজন তরুণদের সিদ্ধান্ত নিতে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।’
মেলায় অংশ নেওয়া আরেক প্রতিষ্ঠান স্টাডি অ্যাব্রোড উইথ মেইসেসের ম্যানেজিং পার্টনার ও চিফ কাউন্সেলর রুহাম মনজুর বলেন, ‘আমরা যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডা, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—এ ছয় দেশে প্রায় তিন শ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের গ্লোবাল সিটিজেন হিসেবে গড়ে তোলা। যাঁরা সত্যিকারের পড়াশোনা করতে চান, তাঁরা যেন এ মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নেন। আশা করি, এ আয়োজন শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে।’
ব্রিটিশ কাউন্সিল নিবেদিত ‘স্টাডি অ্যাব্রোড ফেয়ার ২০২৫’ পাওয়ার্ড বাই ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাস এবং ব্যাংকিং পার্টনার প্রাইম ব্যাংক। স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে সহযোগিতা করছে ফরেন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ফ্যাড-ক্যাব)।
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল রয়েছে এই মেলায়। এর মধ্যে রয়েছে মেইসেস এডুকেশন মিট, শেনজেন এডু লিমিটেড, সিএইচএস এডুকেশন লিমিটেড, টেন মিনিট স্কুল, বিডি এক্সপার্ট এডুকেশন কনসালট্যান্সি, এডুকেশন অ্যাট, ম্যাক্সিমাস এডুকেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশন, এনএইচপি, ইউনিভার্সাল কলেজ বাংলাদেশ, ব্যাকবন লিমিটেড, কোয়েস্ট এডুকেয়ার অ্যান্ড ক্যারিয়ার সার্ভিসেস, ইউনিভার্সাল এডুকেশন, গ্লোবাল ভিশন, ফরেন স্টাডি সল্যুশন, এসটিএস গ্লোবাল এডুকেশন, এডভয়, হক কনসালট্যান্সি, এডুএইড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস ও এডু এইমার্স। এ ছাড়া রয়েছে চরকি, কেএফসি ও প্রথমার স্টল।
মেলার এই আয়োজন ওয়েবসাইটে চলবে ১০ দিনব্যাপী। থাকছে অনলাইন কুইজে অংশ নিয়ে পুরস্কার জেতার সুযোগ। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বুথে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় তথ্য নিতে এবং সরাসরি প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন।