এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম

ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ

এস আলম গ্রুপের মালিকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে তিন দফায় ১০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমতি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বুধবার এ অনুমতি দেওয়া হয়।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড (বর্তমান আভিভা ফাইন্যান্স লিমিটেড) থেকে তিন দফায় যথাক্রমে ৩২ কোটি ৫০ লাখ, ২৪ কোটি ও ৩৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় গত জুলাইয়ে মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে এখন অভিযোগপত্র দেওয়া হচ্ছে।

দুদক সূত্র জানায়, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান মেসার্স এ এম ট্রেডিংয়ের নামে ২০১৩ সালে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। পরে এই টাকা এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এস আলম এডিবল অয়েল লিমিটেডে স্থানান্তর করা হয়। অনুসন্ধান শেষে গত জুলাইয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে এখন অভিযোগপত্র দিতে যাচ্ছে দুদক। এভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে ২৪ ও ৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই ১৩ জনের বিরুদ্ধে আরও দুটি অভিযোগপত্র দেওয়া হচ্ছে।

যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রের অনুমতি দিয়েছে কমিশন, তাঁরা হলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাসান, শাহানা ফেরদৌস, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার, সাবেক ইভিপি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান রাশেদুল হক, সাবেক ব্যবস্থাপক ও করপোরেট ফাইন্যান্স বিভাগের প্রধান নাহিদা রুনাই, সাবেক এসভিপি কাজী আহমেদ জামাল, সাবেক উপব্যবস্থাপক জুমারাতুল বান্না, মাররিন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ, পরিচালক টিপু সুলতান, মো. ইসহাক ও মেসার্স এ এম ট্রেডিংয়ের মালিক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।

এদিকে চট্টগ্রামের একটি জাহাজভাঙা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক শওকত আলী চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে আট হাজার কোটি টাকা লেনদেন ও জাহাজভাঙার ব্যবসার নামে এলসি করে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এ বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, তিনি এখনো এ বিষয়ে কিছু জানেন না। জেনে পরে জানাতে পারবেন।

অন্যদিকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (মাহী বি চৌধুরী) নামে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। আজ দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম মামলা অনুমোদনের বিষয়টি জানিয়েছেন।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়, মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৯ কোটি ৬৮ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এ ছাড়া এই রাজনীতিবিদ ২০ কোটি ৬৯ লাখ ২৫৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাবা এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। বিএনপির আমলে ২০০২ সালের ২১ জুন মুন্সিগঞ্জ–১ আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী। এ ছাড়া ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আবারও মুন্সিগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হন তিনি।