
ব্যবসা, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য, পানিসম্পদসহ নানা খাতে সহযোগিতা নিবিড় করতে বাংলাদেশ–পাকিস্তান নিয়ে নতুন ত্রিপক্ষীয় জোট গঠন করেছে চীন। ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের আলোচনায় এ জোট গঠন করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বেইজিং ও ইসলামাবাদ থেকে প্রকাশিত দুই দেশের বিবৃতির বরাত দিয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদুলু এ খবর জানিয়েছে।
বেইজিং ও ইসলামাবাদের শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি বিবৃতি অনুসারে, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একাধিক ক্ষেত্রে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। এ সপ্তাহে চীনের কুনমিং শহরে এই তিন দেশ তাদের প্রথম ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেছে।
ইউনান প্রদেশে অনুষ্ঠিত তিন দেশের বৈঠকে চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং, বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী ও পাকিস্তানের অতিরিক্ত সচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ ভিডিও লিংকের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেশীসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি, সমতা ও পারস্পরিক বিশ্বাস, উন্মুক্ততা ও অন্তর্ভুক্তি, অভিন্ন উন্নয়ন ও সবার সুফলের সহযোগিতা’ নীতির ভিত্তিতে সহযোগিতা প্রচারের জন্য তিন পক্ষ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিন দেশ বাণিজ্য, শিল্প, সমুদ্রবিষয়ক, পানিসম্পদ, কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যুব সম্পৃক্ততা, সংস্কৃতি ও চিন্তন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতাসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে যৌথ প্রকল্প খুঁজে দেখতে সম্মত হয়েছে। সম্মত উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় কর্মী গোষ্ঠী গঠন করা হবে। এ সহযোগিতার লক্ষ্য তিন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
যৌথ বিবৃতিতে জোর দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের ত্রিপক্ষীয় কাঠামো আক্ষরিকভাবে ‘বহুপক্ষীয়তা ও উন্মুক্ত আঞ্চলিকতাবাদের’ ওপর ভিত্তি করে রচিত। আর এই কাঠামো ‘কোনো তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে পরিচালিত নয়’।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, তিন দেশের বৈঠকের ফাঁকে চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং আলাদাভাবে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী ও পাকিস্তানের অতিরিক্ত সচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বেলুচ ভিডিও লিংকের মাধ্যমে বৈঠকের প্রথম পর্বে অংশ নেন। তিনি ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার উদ্বোধনী বৈঠক আহ্বান করার জন্য চীনের প্রশংসা করেন। জনকেন্দ্রিক উন্নয়নের জন্য তিন পক্ষের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রসচিব চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে গভীর সম্পৃক্ততার জন্য পাকিস্তানের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ঊর্ধ্বমুখী গতিপথে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে পররাষ্ট্রসচিব বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষি, ডিজিটাল অর্থনীতি, পরিবেশ সুরক্ষা, সামুদ্রিক বিজ্ঞান, সবুজ অবকাঠামো, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও জনগণের মধ্যে আদান-প্রদানে সম্পর্ক বাড়াতে চীন ও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য পাকিস্তানের প্রস্তুতির কথা জানান।
আনাদুলুর খবরে আরও বলা হয়েছে, চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন তালেবান প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত উপপ্রধানমন্ত্রী হাজী মাওলাভি আবদুল সালাম হানাফির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।