Thank you for trying Sticky AMP!!

নারী নিপীড়ন বন্ধ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে পদযাত্রা

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার ঢাকায় পদযাত্রা করেন নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা ৫২টি সংগঠনের নেতা কর্মীরা

নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূর করা, নিপীড়ন বন্ধ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীতে পদযাত্রা করেছেন নারীরা। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার এই পদযাত্রার আয়োজন করা হয়।

‘গণতন্ত্রের জন্য নারীর পদযাত্রা’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে অংশ নেন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, বহ্নিশিখা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মতো ৫২টি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঢাকার ফাঁকা সড়কে নানা রঙের ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হন তাঁরা।

রাজধানীতে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট (জিপিও) থেকে সকাল সাড়ে নয়টায় পদযাত্রা শুরু হয়। এরপর আবদুল গণি সড়ক হয়ে হাইকোর্টের সামনে দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে শেষ হয়। পুরো পদযাত্রায় বাজানো হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত রণসংগীত ‘চল্‌ চল্‌ চল্‌!/  ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল/ নিম্নে উতলা ধরণী-তল,/ অরুণ প্রাতের তরুণ দল/ চল্‌ রে চল্‌ রে চল্‌’। সঙ্গে ছিল ঢোলের বাজনা আর নারীদের ‘জাগো জাগো, বিশ্বনারী জাগো’সহ নারীশক্তির নানা স্লোগান। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীদের অংশগ্রহণে পদযাত্রাটি রূপ নেয় ‘প্রতিবাদী বিক্ষোভে’।

পদযাত্রায় অংশ নেন তৃতীয় লিঙ্গ ও রূপান্তরিত নারীদের অনেকে। তাঁদের কণ্ঠে ছিল নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করে সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠার আহ্বান।

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা ‘জীবন গঠন উন্নয়ন সংস্থা’ নামের একটি সংগঠনের সভাপতি শাম্মী হোসাইন বলেন, ‘আমরা তৃতীয় লিঙ্গের হলেও নিজেদের নারী হিসেবেই গণ্য করি। তাই আমাদের তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশে নারীদের যাতে মূল্যায়ন করা হয়, মর্যাদা দেওয়া হয় এবং নারীদের অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়, সে জন্যই আমাদের এই অংশগ্রহণ।’

নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য ও নারী নিপীড়ন বন্ধসহ নানা দাবি জানানো হয় পদযাত্রায়

পদযাত্রার পুরোটায় ছিল নারীদের ‘শৃঙ্খলার শিকল’ থেকে বের করে আনার উদাত্ত আহ্বান। নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের দাবি জানান নারীনেত্রীরা। এই পদযাত্রার আয়োজক সংগঠনগুলোর একটি নারীপক্ষ। সংগঠনটির সদস্য কামরুন নাহার বলেন, ‘গণতন্ত্র আসলে সবার দরকার। আমরা জনগণের অর্ধেক। কিন্তু সেই তালিকা থেকে আমরা বাদ পড়ে যাচ্ছি। বরাবরই বাদ পড়ে যাচ্ছি।’

এদিন রাজধানী ছাড়াও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ১০৬টি স্থানে একই প্রতিপাদ্য নিয়ে এই পদযাত্রা হয়েছে বলে জানান কামরুন নাহার।

পদযাত্রা শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢোলের বাজনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সেখানে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নারীপক্ষের সদস্য রেহানা সামদানী। ঘোষণাপত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব নিপীড়নমূলক আইন বাতিল, নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিতকরণে ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইন বিলুপ্তি, নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ, ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভিন্নমত মেনে নেওয়া, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন মামলার দ্রুত বিচারসহ ১১টি দাবি জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার ঢাকায় পদযাত্রা করেন নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা ৫২টি সংগঠনের নেতা কর্মীরা

অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন ইকবাল আহমেদ এবং লিঙ্গ রূপান্তরিত নারী জয়া। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মায়া চাকমা নিজেদের সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারী সদস্যদের নিয়ে গড়া এফ মাইনর নামের একটি ব্যান্ড দলের গান দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।