Thank you for trying Sticky AMP!!

ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার পেলেন ইউএনও ফরিদা

ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার ২০১৯ পেয়েছেন নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদা ইয়াসমিন। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত। বারহাট্টায় কর্মরত থাকার সময় বাল্যবিবাহ ঠেকানোর স্বীকৃতি হিসেবে ফরিদা ইয়াসমিন এ পুরস্কার পেলেন।

বন্ধু বা সহকর্মীর প্রতি সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত হিসেবে কোনো ব্যক্তির অনন্য সাহসিকতার স্বীকৃতির জন্য ২০১৬ সাল থেকে এ পুরস্কার দিচ্ছে পেপসিকো গ্লোবাল। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নৃশংসভাবে নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেনের নামে পেপসিকো গ্লোবাল পুরস্কারটি প্রবর্তন করেছে।

আজ রোববার রাজধানীর র‍্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফরিদা ইয়াসমিনের হাতে স্বীকৃতি সনদের পাশাপাশি ১০ হাজার মার্কিন ডলার দেওয়া হয়। পুরস্কার তুলে দেন পেপসিকো ইন্ডিয়া রিজিয়নের প্রধান আহমেদ আল শেখ। এ সময় জুরিবোর্ডের সদস্য অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও ফারাজের মা সিমিন হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

২০১৭ সালের মে মাসে বারহাট্টা উপজেলায় ইউএনও পদে যোগ দেন ফরিদা ইয়াসমিন। বারহাট্টা উপজেলায় বাল্যবিবাহের কোনো খবর পেলেই তা বন্ধের জন্য ছুটে যান তিনি। রাত-দিন কিংবা ঝড়-বৃষ্টি কিছুই তাঁর পথ আগলে রাখতে পারে না। গত এক বছর আট মাসে তিনি ৫৯টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছেন। এর মধ্যে চারজন ছিল অসচ্ছল পরিবারের সদস্য। তারা নিরুপায় হয়ে পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছিল। ফরিদা ইয়াসমিন নিজের খরচে ওই চার মেয়ের পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদা ইয়াসমিনের হাতে ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার ২০১৯ তুলে দেন পেপসিকোর ইন্ডিয়া রিজিয়নের প্রধান আহমেদ আল শেখ ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। এ সময় ফারাজের মা সিমিন হোসেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ছবি: সাইফুল ইসলাম

পুরস্কার গ্রহণের পর ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘এই পুরস্কার আমার জন্য অনুপ্রেরণা। ফারাজের আত্মত্যাগের কাছে আমার এ কাজ কিছুই না। ফারাজের আত্মত্যাগ আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আমি আমৃত্যু বাংলাদেশের নারীদের ক্ষমতায়নে কাজ করে যাব।’ তিনি বলেন, ফারাজের আত্মত্যাগ সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক।

ফরিদা ইয়াসমিন নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার মানুষকে ধন্যবাদ জানান।

ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিনের জন্ম জামালপুরে। বাবা ফজলুল হক চৌধুরী ও মা খালেদা বেগম। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। স্বামী জামিল আহম্মেদ ময়মনসিংহ সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। আরিজ নামে তিন বছরের ছেলেকে নিয়েই ওই দম্পতির সংসার।

পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিন। ছবি: সাইফুল ইসলাম

দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কারের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্বাচিত করেছেন। আট সদস্যের জুরিবোর্ডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। সদস্যরা হলেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, এমসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাদ কবির, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক সাবাহাত জাহান, পেপসিকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার দেবাশীষ দেব এবং ফারাজের নানা ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফারাজের ভাই যারেফ আয়াত হোসেন। ছবি: সাইফুল ইসলাম

২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত হন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারাজ আইয়াজ হোসেন। পুরস্কার ঘোষণায় পেপসিকো গ্লোবাল বলেছে, ফারাজ প্রকৃত বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বন্ধুদের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। দৃঢ়তার সঙ্গে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশি তরুণ বা তরুণীদের মধ্যে সাহসিকতার স্পৃহাকে উদ্দীপ্ত করতে এবং ফারাজের চেতনা জাগিয়ে তোলাই এই পুরস্কারের লক্ষ্য।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সংগীত পরিবেশন করা হয়। ছবি: সাইফুল ইসলাম

এর আগে ২০১৬ সালে প্রথম ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার পেয়েছিলেন মাদারীপুর কলেজের কর্মচারী মিরাজ সরদার। ওই কলেজের শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলাকারী জঙ্গিকে তিনি হাতেনাতে ধরে ফেলেন। ২০১৭ সালে পুরস্কার পান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খন্দকার আবু তালহা। এক প্রতিবেশী ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন দেখে তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ দিয়েছিলেন তালহা।

আরও পড়ুন: