মে দিবসে শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি

৮ ঘণ্টা কাজে জীবনযাপন করা যায় এমন মজুরি দিতে হবে

ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করার দাবিতে প্রেসক্লাব এলাকায় মিছিল
ছবি: সাজিদ হোসেন

প্রতিনিয়তই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এই দাম শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এ জন্য শ্রমিকদের বাড়তি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। আট ঘণ্টা কাজ করে জীবনযাপন করা যায়, এমন মজুরি দাবি শ্রমিকদের।

১৩৬তম মে দিবস উপলক্ষে আজ রোববার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব, পল্টন মোড় ও নয়াপল্টন এলাকায় কর্মসূচি পালন করে এমন দাবি জানিয়েছে অন্তত ৯টি সংগঠন। সংগঠনগুলো হলো, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টার, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) ও ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ।

নয়াপল্টনে সমাবেশ করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় আমরা শ্রমিকেরা বাঁচার মতো মজুরি চাই। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো শ্রমিকেরা কর্মস্থলে কীটপতঙ্গের মতো মারা যান। সে জন্য নিরাপদ কর্মস্থল অত্যন্ত জরুরি।’

পল্টন মোড়ে সকালে সমাবেশ করে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, ‘শ্রমঘণ্টা ৮ ঘণ্টার বিনিময়ে জীবনযাপনের উপযোগী মজুরি চাই।’

অবশ্য অধিকাংশ সংগঠনই প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিল করেছে। গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতি এবং ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ) যৌথভাবে প্রেসক্লাবসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিল ও সমাবেশ করে। এ সময় তারা বাঁচার মতো মজুরি, নিরাপত্তা ও প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়নের লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দাবি জানায়।

বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে কয়েকটি সংগঠন

প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সমাবেশ করে দাবি জানায়, ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন এবং ন্যায্য মজুরি ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশি হামলা চলবে না।

ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টার দাবি জানিয়ে বলেছে, প্রাতিষ্ঠানিক–অপ্রাতিষ্ঠানিক সব খাতে শ্রমিক–কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আগামী বাজেটে পেনশন, আবাসন, রেশন, মাতৃত্বকালীন সুবিধার জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। বন্ধ করা রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানা আধুনিকায়ন করে চালু করতে হবে।

বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। প্রেসক্লাবের সামনে এক কর্মসূচিতে তারা বলেছে, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিকদের মজুরি কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু হলে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, পাটকল, চিনিকলসহ বন্ধ সকল কলকারখানা চালু করা এবং ঠিকাদার ও আউটসোর্সিং ব্যবস্থা বাতিল করে স্থায়ী পদে অস্থায়ী নিয়োগ বন্ধ করার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ বলেছে, মে দিবসের চেতনার আলোকে শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম এবং ৮ ঘণ্টা বিনোদনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

বাঁচার মতো মজুরি নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে কয়েকটি সংগঠন

ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা চালক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকা শহরের প্রায় ৫০ হাজার সিএনজি চালক ও এক কোটি যাত্রী প্রায় এক হাজার সিএনজিমালিকের কাছে জিম্মি। যাত্রীদের ধারণা সিএনজিচালকেরা যাত্রীদের ওপর জুলুম করে। কিন্তু সিএনজিমালিকদের কাছে চালকেরা যে কতটা অসহায়, সেটা কেউ জানেও না, শোনেও না।

বিল্পবী শ্রমিক আন্দোলন ও বিল্পবী ছাত্র–যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার দালাল আমলাদের প্রতিনিধি। তারা শ্রমিক–কৃষকসহ নিপীড়িত জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে না।