ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চালকেরা। একপর্যায়ে পুলিশের সাঁজোয়া যান ঘটনাস্থলে এলে গাড়িটিকে ঘিরে ধরেন অবরোধকারীরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর মিরপুর গোলচত্বর এলাকায়
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চালকেরা। একপর্যায়ে পুলিশের সাঁজোয়া যান ঘটনাস্থলে এলে গাড়িটিকে ঘিরে ধরেন অবরোধকারীরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর মিরপুর গোলচত্বর এলাকায়

ব্যাটারিচালিত রিকশা চালুর দাবি

মিরপুরে দিনভর বিক্ষোভ, পুলিশ বক্সে আগুন

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল রোববার রাজধানীর মিরপুরে দিনভর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চালকেরা। বিক্ষোভকারীরা কালশী মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের একটি বক্স পুড়িয়ে দিয়েছেন। ভাঙচুর করেছেন অন্তত ১০টি যানবাহন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করে। একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় পুলিশের এক সদস্যসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দফায় দফায় অবরোধ, সংঘর্ষ চলে। এ সময় আটকা পড়ে অনেক যানবাহন। দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

১৫ মে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে অভিযানে নামে পুলিশ।পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অটোরিকশা বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল সকাল ১০টার দিকে মিরপুর গোলচত্বর এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েক শ চালক। এ সময় রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে তুলে দিতে গেলে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা মিরপুর গোলচত্বর এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে মিরপুরের শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও পল্লবীর কালশী মোড় এলাকায়।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, রাস্তায় অটোরিকশা চলতে দিচ্ছে না পুলিশ। কয়েক দিন ধরে মিরপুর এলাকায় অনেক চালককে আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে অটোরিকশা। তাঁরা গতকাল দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিলেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, একপর্যায়ে পুলিশ ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা তাঁদের হামলা করলে বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন।

আটক চালকদের ছেড়ে দেওয়া ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে দেওয়া পর্যন্ত অটোরিকশা চালানোর সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান চালক হেলাল উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। সকালে কিস্তির টাকা নেওয়ার জন্য লোকজন এসে তাঁর বাসায় বসে আছেন। অটোরিকশা বন্ধ থাকায় তাঁর কোনো উপার্জন নেই। বাধ্য হয়ে তিনি রাস্তায় নেমেছেন।

পুলিশ বলছে, দিনভর অটোরিকশাচালকদের বিক্ষোভে রাস্তায় তীব্র যানজট হয়। মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে বলে বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। এ সময় কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে পুলিশের এক সদস্য আহত হন।

বিক্ষোভ চলাকালে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে কালশী মোড়ে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণ অটোরিকশাচালকদের সাহস নেই পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়ার। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে মিশে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

একজন হাসপাতালে ভর্তি

মিরপুরের কালশী মোড়ে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেটের আঘাতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা বলেন, আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বিক্ষোভ চলাকালে কালশী এলাকায় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন সাগর চৌকিদার (২৫) নামের এক যুবক। তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর বন্ধু পরিচয়ে রাকিবুল মিয়া বলেন, তাঁরা দরজির দোকানে কাজ করেন। দুই বন্ধু উত্তরায় কাজ শেষে মিরপুরের বাসায় ফিরছিলেন। বিকেল চারটার দিকে রাস্তায় অবরোধ থাকায় তাঁরা হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলেন। তখন পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। সেই সময় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট সাগরের শরীরে লাগে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আহত সাগর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। তাঁর বাড়ি ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানা এলাকায়।

পুলিশ বক্সে আগুন

পুলিশের ধাওয়ায় বেলা তিনটার দিকে মিরপুর গোলচত্বর এলাকা ছাড়েন বিক্ষোভকারীরা। পরে তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেন। বিকেল চারটার দিকে কয়েক শ বিক্ষোভকারী কালশী মোড় এলাকায় অবস্থান নেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিপেটা করে রাস্তা থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশ বক্সের সামনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া করেন। তাঁদের উদ্ধারে অন্য পুলিশ সদস্যরা ছুটে যান। এ সময় কয়েকজন বিক্ষোভকারী ট্র্যাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেন। এতে বক্সের পুরোটা পুড়ে যায়।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাসুক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকটি বাস ভাঙচুর ও পুলিশের একটি বক্স পুড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে মিশে অন্য কেউ এ ঘটনা ঘটিয়েছে কি না, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।