ভূমিকম্পের সময় ভয়ে শয্যা থেকে তুলে অসুস্থ শিশুকে কোলে জড়িয়ে আছেন মা। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, ঢাকা; ২১ নভেম্বর ২০২৫
ভূমিকম্পের সময় ভয়ে শয্যা থেকে তুলে অসুস্থ শিশুকে কোলে জড়িয়ে আছেন মা। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, ঢাকা; ২১ নভেম্বর ২০২৫

ভূমিকম্প

কেউ কাঁদছিলেন, কারও হাতে তখনো শিশুকে দেওয়া স্যালাইনের পাইপ ধরা

কাগজে–কলমে শীতকাল শুরু না হলেও গ্রামীণ জনপদে ইতিমধ্যে জেঁকে বসেছে শীত। শহরেও কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে বেড়েছে শিশুদের ঠান্ডা, কাশি ও জ্বরের মতো অসুখ। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে বেড়েছে রোগীর চাপ। পরিস্থিতির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আজ শুক্রবার সরেজমিনে হাসপাতালটিতে যাই।

ঘড়িতে তখন ঠিক সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট। শিশু হাসপাতালের নিউমোনিয়া ওয়ার্ডে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। প্রথম আলোর আলোকচিত্র সাংবাদিক তানভীর আহাম্মেদ হাসপাতালের শয্যায় থাকা রোগীদের ছবি তুলছিলেন।

হঠাৎ অতিমাত্রায় কম্পন শুরু হলো। প্রথমে তেমন কিছু না বুঝলেও পরে অনেক শিশুর অভিভাবক হুড়োহুড়ি করে বাইরে বের হতে চাইলেন। নিউমোনিয়া ওয়ার্ড শিশু হাসপাতালের সপ্তমতলায়। নামতে গিয়ে তীব্র ঝাঁকুনিতে মেঝেতে পড়ে গেলেন কয়েকজন।

নিউমোনিয়া ওয়ার্ডের বারান্দায় এসে দেখা যায়, ভবনের গ্রিলগুলো জোরে কাঁপছিল। মানুষের চোখেমুখে তখন আতঙ্ক। কেউ আদরের সন্তানকে বুকে চেপে ধরে কাঁদছিলেন। কেউ এদিক–সেদিক ছুটছিলেন।

আকস্মিক ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে শিশুর হাতে লাগানো স্যালাইনের পাইপ নিয়েই হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে আসেন অভিভাবকেরা। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, ঢাকা; ২১ নভেম্বর ২০২৫

কয়েক সেকেন্ডের ঝাঁকুনিতে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। নিউমোনিয়া ওয়ার্ডের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, আসমা নামের এক নারীর হাত–পা কাঁপছিল। পাশেই তাঁর শিশুকন্যা বসে আছে। কোনো কথা বলতে পারছিলেন না এই নারী।

পাশেই আরেক ষাটোর্ধ্ব নারীকে দেখা যায়—হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। এই নারীর নাম সোনিয়া বেগম। তিনি বলেন, ‘নিজের জীবন নিয়ে তেমন চিন্তা হয়নি। কিন্তু নাতনির কথা মাথায় আসতেই মনটা ছোট হয়ে আসে। অসুস্থ বাচ্চাটার যদি কিছু হয়ে যেত।’

নিউমোনিয়া ওয়ার্ডে থাকা অন্য অভিভাবকদের প্রায় সবাইকে নিজের কলিজার টুকরাদের শয্যা থেকে তুলে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সবার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। বাইরে এসে দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষ অশ্রুসিক্ত।

নিউমোনিয়া ওয়ার্ড থেকে নেমে শিশু হাসপাতালের সমানে ফাঁকা জায়গায় এসে দেখা যায়, শিশুদের কোলে নিয়ে অনেকেই দাঁড়িয়ে আছেন। কোনো শিশুর হাতে ক্যানুলা লাগানো। স্যালাইনের পাইপ ধরে রেখেছেন অভিভাবক। বিপদ থেকে বাঁচতে তাঁরা দৌড়ে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছেন। এমন মানুষের সংখ্যা একশ র কম হবে না।

বেশির ভাগ মানুষের কোলে নিজের সন্তান। কারও সঙ্গে এসেছেন স্বজনেরা। কুমিল্লা সদর উপজেলা থেকে সন্তানের চিকিৎসার জন্য আসা মরিয়ম বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এমন ভয় আর কখনো পাইনি। বেঁচে থাকব কি না, বুঝতে পারছিলাম না। নিচের ফ্লোরে থাকায় দৌড়ে বাইরে এসেছি।’

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। ভূমিকম্পে ঢাকার কয়েকটি এলাকায় ভবন হেলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক শ। অনেকেই বাসাবাড়ি কিংবা কর্মস্থল থেকে হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে আহত হয়েছেন।