
প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ক্ষমা চাইতে বললেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তাঁদের তিন দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কমিটিও প্রত্যাখ্যান করেছেন তাঁরা।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি জুবায়ের আহমেদ এ কথা বলেন। এ সময় তিনি পাঁচটি দাবি ঘোষণা করেন।
এরপর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড় ছাড়েন আন্দোলনকারীরা। তারপর তাঁরা আবারও শাহবাগ অবরোধ করেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য ‘প্রতীকী জানাজা’ পড়েন।
প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে যে পাঁচ দফা দাবি তোলা হয়েছে সেগুলো হলো শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে আন্দোলনকারীদের সামনে এসে ক্ষমা চাওয়া ও জবাবদিহি করা; প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার ঘোষিত আট সদস্যের পর্যালোচনা কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে সংস্কারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ আন্দোলনের অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে নতুন কমিটি গঠন; পেশ করা তিন দফা দাবিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেনে নিয়ে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে আজকেই নিশ্চয়তা দিতে হবে; পুলিশের হামলায় আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে এবং আন্দোলন চলাকালে সব শিক্ষার্থীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে; এবং সর্বশেষ পুলিশ দিয়ে এই যৌক্তিক আন্দোলনে কোনো হামলা করা যাবে না ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং চাকরিচ্যুত করতে হবে।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহবাগে অবস্থান নেওয়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে যান বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান।
শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস আর জলকামানের ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানান। বুয়েট প্রশাসন পুলিশের এ আচরণে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, মর্মাহত।
উপাচার্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্যসহ শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তাদের অনুরোধ করেন এবং দায়িত্ব নিয়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে বসে কমিটি গঠন করে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সমস্যা সমাধানে কমিটি গঠন করা হয়। একপর্যায়ে তিনি শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানান। তবে এতে সায় দেননি শিক্ষার্থীরা।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে প্রকৌশলী লিখতে না দেওয়া, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাউকে পদোন্নতি দিয়ে নবম গ্রেডে উন্নীত না করা এবং দশম গ্রেডের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্নাতক প্রকৌশলীদের সুযোগ দেওয়া—এই তিন দফা দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার পাঁচ ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। আজ তাঁদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হলো ‘লংমার্চ টু ঢাকা’। এর অংশ হিসেবে বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগের মূল সড়কে অবস্থান নেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় শাহবাগ ও আশপাশের সড়ক।
বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা যমুনা অভিমুখে রওনা দেন। তাঁরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড় পেরোনোর চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
আন্দোলনকারীদের দাবি, পুলিশের হামলায় ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, পুলিশকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছোড়েন। এই ঘটনায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।