Thank you for trying Sticky AMP!!

সুরে আর বাণীতে অশুভ প্রবণতা বিনাশের আহ্বান

রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ

নতুন বছরের নতুন দিনে নির্ভয়ে গান ধরেছিলেন দেশের ঐতিহ্যবাহী সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানটের ছোট-বড় নানা বয়সী শিল্পীরা। দালানকোঠায় আকীর্ণ রাজধানীর একমুঠো সবুজ রমনা উদ্যানের বটমূলে আজ শুক্রবার সূর্যের আলোয় দিগন্ত উদ্ভাসিত হওয়ার সময়ই সারেঙ্গিতে আহির ভৈরব রাগের সুর আর তবলালহরায় স্বাগত জানানো হলো বাংলা নতুন বছর ১৪৩০-কে। নতুন বছরে জানানো হলো সব অশুভ প্রবণতা বিনাশের আহ্বান।

ছায়ানট এই বটতলায় বাংলা নববর্ষের প্রভাতে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে সেই ১৯৬৭ সাল থেকে। এর মধ্যে কেবল মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে আর কোভিড অতিমারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বটমূলে এ অনুষ্ঠান হতে পারেনি। তবে কোভিডকালে নববর্ষের অনুষ্ঠান হয়েছে সংক্ষিপ্ত পরিসরে, ঘরোয়া আয়োজনে।
সূচনায় রাগ পরিবেশনায় ছিলেন গৌতম সরকার ও শৌণক দেবনাথ।

Also Read: আহির ভৈরব সুরে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আগতেরা

পরে গানের পর্ব শুরু হয়েছিল বড়দের সমবেত কণ্ঠে ‘ধ্বনিল আহ্বান মধুর গম্ভীর’ গানটি দিয়ে। এরপর ছিল একক কণ্ঠের গান ‘মনোমোহন, গহন যামিনী শেষে’। আরপর আবৃত্তি ‘বৈশাখ’।
এবারের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছিল প্রকৃতি, দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, আত্মশক্তি ও জাগরণের গানে গানে। সঙ্গে ছিল দুটি আবৃত্তি। অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘ধর নির্ভয় গান’।

একক কণ্ঠের গান ছিল ১২টি ও সম্মেলক গান ১০টি। ছোট ও বড়দের কণ্ঠে চারটি করে এবং সবাই মিলে দুটি। গান নেওয়া হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, অতুল প্রসাদ সেন, লালন সাঁই, শাহ আবদুল করিমসহ বিভিন্ন মনীষীর রচনা ও ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীতের সম্ভার থেকে।

গানগুলোর মধ্যে ছিল ‘রাত্রি এসে যেথায় মেশে’, ‘মোরে ডাকি লয়ে যাও’, ‘ওগো অন্তর্যামী ভক্তের তব’, ‘অন্তরে তুমি আছ চিরদিন’, ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে’, ‘স্বদেশ আমার’, ‘নিচুর কাছে নিচু হতে’, ‘সবারে বাসরে ভালো’, ‘মন মজালে ওরে বাউলগান’, ‘মানুষ ছাড়া খ্যাপারে তুই’ এবং ‘এমন মানবসমাজ কবে গো সৃজন হবে’।
এসব গান গেয়ে শুনিয়েছেন পার্থ প্রতীম রায়, মোস্তাফিজুর রহমান, রেজাউল করিম, খায়রুল আনাম শাকিল, ইফফাত আরা দেওয়ান, মাইদুল ইসলাম, ফারহানা আক্তার, লাইসা আহমদে লিসা, আবুল কালাম আজাদ, খায়রুল ইসলাম ও চন্দনা মজুমদার।

ছায়ানটের পক্ষ থেকে সমবেত সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী লাইসা আহমদ লিসা

সম্মেলক কণ্ঠের গানগুলোর মধ্য ছিল ‘শুভ্র সমুজ্জ্বল হে চির-নির্মল’, ‘মৃদুল মন্দে মুঞ্জুল ছন্দে’, ‘সংকোচের বিহ্বলতা নিজের অপমান’, ‘আমি ভয় করব না ভয় করব না’, ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব’, ‘আমাদের নানান মতে’, ‘এই আমাদের বাংলাদেশ’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’ এবং ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান’। আবৃত্তি করেছেন সিদ্দিকুর রহমান ও মাহমুদা আখতার।

এবারের অনুষ্ঠানে ছায়ানটের সভাপতি সংগীতজ্ঞ নবতিপর সন্‌জীদা খাতুন উপস্থিত থাকতে পারেনি বয়স ও স্বাস্থ্যগত কারণে। প্রতিবছর তিনিই গানের পালা শেষে নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে অল্প কথায় অনুপ্রেরণাময় বক্তব্য দেন। এবারও তেমন করেই স্বাগত জানানো হলো ১৪৩০ বঙ্গাব্দকে।

তবে ছায়ানটের পক্ষে লিখিত সেই বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী লাইসা আহমেদ লিসা। বক্তব্যে নতুন বছরে সবার জীবনের মঙ্গল কামনা করে বলা হলো, ‘ধারাবাহিক অগ্রগতি দেশের ভবিষ্যৎ পদরেখা হিসেবে আমাদের প্রাণে যেমন আশার সঞ্চার করে, তেমনি লোভ, বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা ও বৈষম্য আমাদের হতাশ করে।

আমাদের অর্জনগুলো ম্লান করে দেয়। আদিকাল থেকে বাংলার সাহিত্য ও সংগীতসমাজের শুভশক্তিকে জাগ্রত করে সম্প্রীতির বন্ধকে নিবিড়তর করে চলেছে। এই ধারার গান ও পাঠ সমাজের বিভক্তি অতিক্রম করুক। অশুভ প্রবণতার বিনাশ ঘটাক। নির্মাণ করুক অগ্রসর চিন্তার ভিত্তি।’ এ-ই ছিল এবার নববর্ষের প্রভাতের আহ্বান।

যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন তবলায় এনামুল হক ওমর, গৌতম সরকার, স্বরূপ হোসেন, ঢোলে শিবু দাস, মন্দিরায় প্রদীপ কুমার রায়, সেতারে ফিরোজ খান, এসরাজে অসিত বিশ্বাস, বাঁশিতে মামুন, কি-বোর্ডে রবিন্স চৌধুরী ও দোতারায় ছিলেন অরূপ কুমার শীল।