Thank you for trying Sticky AMP!!

মগবাজারে ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের তদন্ত কবে শেষ হবে

২০২১ সালের ২৭ জুন সন্ধ্যার পর মগবাজারের ‘রাখি নীড়’ নামের ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল।

রাজধানীর মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত এক বছর আট মাসেও শেষ হয়নি। মামলায় কেউ গ্রেপ্তারও হননি।

মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বলছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় কে বা কারা দায়ী, কোনো সংস্থার অবহেলা ছিল কি না, তা নিরূপণের চেষ্টা চলছে।

২০২১ সালের ২৭ জুন সন্ধ্যার পর মগবাজারের ‘রাখি নীড়’ নামের ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন দুই শতাধিক ব্যক্তি। ঘটনায় পরদিন ২৮ জুন অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে রাজধানীর রমনা থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করে পুলিশ। মামলার বাদী রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম।

বিস্ফোরণের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদন ২০২১ সালেই হাতে পায় মামলার তদন্ত সংস্থা সিটিটিসি। কিন্তু বিস্ফোরক পরিদপ্তরের তদন্ত শেষ হলেও সিটিটিসি এখনো প্রতিবেদন হাতে পায়নি। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য পেতে গত বছরের মে মাসে আদালতে আবেদন করে সিটিটিসি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির পরিদর্শক মোদাচ্ছের কায়সার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় কে দায়ী, কারও অবহেলা ছিল কি না, তা চূড়ান্ত করে বলার সময় এখনো আসেনি। বিস্ফোরণের কারণ ও দায় নিরূপণে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই প্রতিবেদন আমরা এখনো হাতে পাইনি। প্রতিবেদনটি পেলেই বিস্ফোরণের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা সম্ভব হবে।’

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের তদন্ত তদারক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সংস্থাটির তৎকালীন প্রধান পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ। তিনি সম্প্রতি সরকারের অন্য একটি দপ্তরে বদলি হয়েছেন। পরিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে গত সোমবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে সিটিটিসি চিঠি দিয়েছিল কি না, তা আমার জানা নেই। তবে একটি সরকারি সংস্থা আরেকটি সরকারি সংস্থার কাছে তথ্য চাইলে তা দিতে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।’

তবে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সাবেক এই প্রধান পরিদর্শক জানান, ভবনটির ভেতরে ত্রুটিপূর্ণ লাইন থেকে নির্গত গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে বলে সংস্থার তদন্তে উঠে এসেছে।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মগবাজারে গিয়ে দেখা যায়, ‘রাখি নীড়’ ভবনটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। টিনের তৈরি বেড়া দিয়ে ভবনের জমি ঘিরে রাখা হয়েছে।

পার্শ্ববর্তী লাবণি মাস্টার্স টেইলার্সের মালিক মাকসুদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, সেদিনের বিস্ফোরণের কথা মনে পড়লে তিনি এখনো আঁতকে ওঠেন। বিস্ফোরণের পর বিধ্বস্ত ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে ভবনটিতে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। এই কাজে কারা নিয়োজিত ছিলেন, সেই তথ্য পেতে সিটিটিসি গত বছর আদালতের দ্বারস্থ হয়। তবে এই তথ্য এখন হাতে পাননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোদাচ্ছের।

Also Read: চার সংস্থার অসহযোগিতায় শেষ হচ্ছে না তদন্ত

মামলার এজাহারে বলা হয়, তিনতলাবিশিষ্ট ভবনটিতে একাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছিল। ভবনটির মালিক, শর্মা হাউস, বেঙ্গল মিট, গ্র্যান্ড কনফেকশনারি, সিঙ্গার ইলেকট্রনিকস, তিতাস গ্যাস ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মধ্যে কারও না কারও অবহেলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নীতিমালা না মেনে জীর্ণ ভবনটির নিচতলায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘চিলার’ (ঘর ঠান্ডা রাখার যন্ত্র) ব্যবহার করছিল হিমায়িত মাংস বিক্রির প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল মিট। ভবনের নিচে তিতাসের একটি পরিত্যক্ত গ্যাসলাইন পাওয়া যায়। পরিত্যক্ত হলেও সেই লাইনে গ্যাস সরবরাহ হতো। এই লাইনের ছিদ্র থেকে নির্গত গ্যাস বেঙ্গল মিটের চিলার রুমে জমা হয়। সেখানে কোনো কারণে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ (স্পার্ক) থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

Also Read: বিভিন্ন সংস্থার গাফিলতি, এগোয়নি মামলার তদন্ত

তবে বিস্ফোরণের ঘটনার পর বেঙ্গল মিটের হেড অব কমার্শিয়ালের দায়িত্বে থাকা আল আমিন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, চিলার রুমে গ্যাস জমা হয়ে কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, সে ব্যাপারে তাঁর কোনো ধারণা নেই।

Also Read: পুলিশের তদন্তেও উঠে এল তিতাসের অবহেলা

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক নূর খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় দুই বছর হতে চললেও মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের মামলায় অভিযোগপত্র দিতে না পারাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পরে প্রায় একই রকমের বিস্ফোরণের একাধিক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যাদের দায়িত্ব, তাদের অবহেলায় সাধারণ মানুষ বারবার প্রাণ দিচ্ছে। ঘটনার পর মামলা হয়, কিন্তু তদন্ত শেষ হয় না, বিচারও হচ্ছে না। এভাবে দেশে একটি বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।’

Also Read: কারও যেন দায় নেই, ক্ষতিপূরণ পাওয়াটাও দুরাশা