
দুর্ঘটনা, মৃত্যু, যানজট, সর্বোপরি গণমাধ্যমের সমালোচনার পরও থামছে না উল্টো পথে গাড়ি চালানো। মন্ত্রী-সাংসদ, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার ব্যক্তির পাশাপাশি পুলিশের গাড়িও চলছে উল্টো পথ ধরে।
গত সোমবার রাজধানীর কাকলীতে উল্টো পথে পুলিশের রিকুইজিশন করা একটি গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াজউদ্দিনের (অপু) মৃত্যু হয়। মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে গতকাল প্রায় দুই ঘণ্টা শ্যামলীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তবে গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে উল্টো পথে গাড়ি চালাতে দেখা যায় অনেককে। এ ক্ষেত্রে পুলিশকে যেমন নীরব দেখা যায়, তেমনি পুলিশের মোটরসাইকেল, গাড়িও উল্টো পথে চলতে দেখা যায়। গতকাল বিকেলে বিজয় সরণির মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, তেজগাঁওয়ের লিংক রোড দিয়ে উল্টো পথে অহরহ গাড়ি ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। মোড়ে পুলিশের কনস্টেবলরা দাঁড়িয়ে থাকলেও তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
এ ছাড়া পুরান ঢাকার জয়কালী মন্দির সড়ক থেকে টয়েনবী সারকুলার রোডে যেতে গাড়ি এক দিকে চলাচলের নিয়ম থাকলেও কাউকেই এ নিয়ম মানতে দেখা যায়নি। রিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার এমনকি প্রশাসনের অনেক গাড়ি ট্রাফিক আইন না মেনে উল্টো পথে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। ফার্মগেটের খামারবাড়ির সামনে দিয়ে আসা রাস্তাটিতেও কিছু গাড়ি উল্টো পথে চলতে দেখা যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। গতকালের ঘটনার পর আমরা আবারও কড়া ভাষায় সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছি, যেন কোনো গাড়ি উল্টো পথে যেতে না পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা তো (ট্রাফিক পুলিশ) মূলত মোড়গুলোতে গাড়ির চলাচল নিয়ন্ত্রণ করি, তাই দেখা যায় অনেক সময়ই অগোচরে উল্টো পথে চলে যাচ্ছে। তাই সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’
বিকেলে কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউর বাংলামোটর এলাকায় উল্টো পথে পুলিশের গাড়ি আসতে দেখা যায়। রাজধানীর মিন্টো রোড, হেয়ার রোড, সোনারগাঁও হোটেল মোড় ও
শাহবাগ এলাকা দিয়ে উল্টো পথে সরকারি কর্মকর্তা ও ভিআইপি লোকদের গাড়ি সবচেয়ে বেশি চলতে দেখা যায়। উল্টো পথে গাড়ি চলাচল বন্ধে পুলিশ রাজধানীর হেয়ার রোডে কাঁটাযুক্ত একধরনের ডিভাইস বসিয়েছিল। কিন্তু পরে উল্টো পথে গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ডিভাইসটি সরিয়ে নিতে হয়।
নিরাপদ সড়ক চাইয়ের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন প্রথম আলোকে বলেন, উল্টো পথে গাড়ি চালানোর ঘটনাটি দিনে দিনে বাড়ছে। আগে দেখা যেত যে শুধু উচ্চপর্যায়ের লোকেরা কাজটি করছেন। আর এখন সবাই করছেন। এমনকি পুলিশ যেখানে এই আইন রক্ষা করবে, মানুষকে আইনের শিক্ষা দেবে, সেখানে তারাই এটি লঙ্ঘন করছে। এ জন্য সাধারণ মানুষও এ আইন লঙ্ঘনের সাহস পাচ্ছে। তাই পুলিশ ও ভিআইপি লোকদেরই আগে ঠিক করতে হবে, তা না হলে আইন কার্যকর করা সম্ভব না।