Thank you for trying Sticky AMP!!

তরুণী পাচার চক্রের নেটওয়ার্ক ‘ভারত হয়ে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত’

ভারতে বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় এই পাঁচজনের ছবি দিয়ে তাদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল আসাম পুলিশ। পরে এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে বেঙ্গালুরু পুলিশ

ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনকারীরা একটি আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য। বাংলাদেশ, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে এ চক্রের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত বলে পুলিশ জানিয়েছে।  

ভারত ও বাংলাদেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করা যৌন নির্যাতনের এ ঘটনায় বেঙ্গালুরুতে রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২৬) নামের যে যুবক গ্রেপ্তার হয়েছেন, তিনি এ চক্রের অন্যতম সদস্য বলে পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

আজ শনিবার বিকেলে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ তাঁর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রিফাদুল ইসলাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু অপরাধীর সঙ্গে মিলে মানব পাচারের আন্তর্জাতিক চক্র গড়ে তুলেছিলেন। এ চক্রের সদস্যরা লেখাপড়ায় অমনোযোগী স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের ‘টার্গেট’ করত।

Also Read: টিকটকের ফাঁদে ফেলে তরুণীদের ভারতে পাচার

উপকমিশনার বলেন, মেয়েদের ফাঁদে ফেলতে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলেছিল এ চক্র। আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরাই গ্রুপটি পরিচালনা করেন।

সেখানে একজন অ্যাডমিন হিসেবে রয়েছেন রিফাদুল ওরফে টিকটক হৃদয়। এ ফেসবুক গ্রুপে টিকটক ভিডিও তৈরির প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েদের আকৃষ্ট করা হতো। এ গ্রুপের মাধ্যমে গত বছরের শেষ দিকে ঢাকার পাশের একটি জেলার রিসোর্টে ৭০০ থেকে ৮০০ তরুণ-তরুণীকে নিয়ে ‘পুল পার্টির’ আয়োজন করা হয়েছিল। ওই পার্টি আয়োজনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রিফাদুল।

মো. শহীদুল্লাহ বলেন, এ ফেসবুক গ্রুপে সুনির্দিষ্ট কিছু সদস্য আছেন, যাঁরা গ্রুপের নারী সদস্যদের ভারতের বিভিন্ন মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পারলারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দিয়ে পাচার করে আসছিলেন। চক্রের মূল আস্তানা ভারতের বেঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায়। চক্রটির ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু হোটেলের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। সেই হোটেলগুলোতে চাহিদামতো বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো।

Also Read: বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তারদের দুজন ‘পালাতে গিয়ে’ গুলিবিদ্ধ

তিনি বলেন, ‘ভারতে পাচার হওয়া মেয়েদের আনন্দপুরে নিয়ে যাওয়ার পর কৌশলে নেশাজাতীয় কিছু বা মাদকদ্রব্য সেবন করিয়ে বা জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে এসব নারীকে সব সময় হুমকি দেওয়া হয়, অবাধ্য হলে বা পালানোর চেষ্টা করলে এ ভিডিও তাঁদের স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’

সম্প্রতি কয়েকজন মিলে এক বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতনের ভিডিও অনলাইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় প্রথমে ভারতে এবং পরে বাংলাদেশেও ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরই নির্যাতনকারীদের ধরতে ভারত ও বাংলাদেশে তৎপরতা শুরু হয়। প্রথম পদক্ষেপ নেয় ভারতের আসাম পুলিশ। ওই ভিডিও থেকে পাঁচ নির্যাতনকারীর ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য টুইটারে পুরস্কারের ঘোষণা দেয় তারা। ভিডিওটি বেঙ্গালুরুর একটি মোবাইল থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পর তৎপর হয় সেখানকার পুলিশ। বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরু শহরের একটি ভাড়া বাসা থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগেই বাংলাদেশ পুলিশ নির্যাতনকারীদের একজন হিসেবে রিফাদুল ওরফে টিকটক হৃদয়কে শনাক্ত করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নির্যাতনের শিকার মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতেই রিফাদুলসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও চারজনকে আসামি করে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন মেয়েটির বাবা।

ঢাকার ফুটপাতে শরবত বিক্রেতা ওই বাবা জানান, মগবাজার এলাকার বাসিন্দা ‘টিকটক হৃদয়’ মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর কথা বলে তাঁর মেয়েকে বছরখানেক আগে ভারতে নিয়ে গেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার শহীদুল্লাহ বলেন, ‘তরুণীকে নির্যাতনে জড়িতরা সবাই আন্তর্জাতিক নারী পাচার গ্রুপের সদস্য বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’