Thank you for trying Sticky AMP!!

পাসপোর্ট করতে আসা রোহিঙ্গারা পার পেয়ে যাচ্ছে

প্রতীকী ছবি

কে মামলা করবে—পাসপোর্ট অফিস নাকি পুলিশ? এ টানাপোড়েনে পার পেয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা।

বাংলাদেশি পরিচয়ে পাসপোর্ট করতে আসা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে স্ব স্ব শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মামলা না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরির সঙ্গে জড়িত দালাল চক্রকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ মাসে চট্টগ্রামের দুটি পাসপোর্ট কার্যালয়ে আসা ৭৯ রোহিঙ্গাকে পুলিশে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে মামলা হয়েছে শুধু তিনজনের বিরুদ্ধে। চলতি মাসে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে বাংলাদেশি পাসপোর্টসহ ছয় রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পরিচয় গোপন করে ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্ট করতে আসা ফৌজদারি অপরাধ। পাসপোর্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তা কিংবা পুলিশকে বাদী হয়ে পরিচয় গোপন করে মামলা করতে হবে। রিমান্ড ও তদন্তে বেরিয়ে আসবে চক্র। নইলে এই ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকবে।

চট্টগ্রামের দুটি পাসপোর্ট কার্যালয়ের মধ্যে নগরের মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট কার্যালয়ের আওতায় রয়েছেন হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও সন্দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দারা। এ ছাড়া নগরের ডবলমুরিং, বন্দর, পতেঙ্গা, বায়েজিদ বোস্তামী, পাহাড়তলী, হালিশহর ও আকবর শাহ থানা এ কার্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে পাঁচলাইশের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের আওতায় রয়েছে বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী উপজেলা এবং নগরের কোতোয়ালি, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, পাঁচলাইশ ও কর্ণফুলী থানা এলাকা। দুটি কার্যালয়ে দৈনিক ৭০০–এর বেশি আবেদন জমা পড়ে।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার নাম-ঠিকানা দিয়ে আবদুল মালেক নামে এক ব্যক্তি গত ২৪ জুলাই পাঁচলাইশ পাসপোর্ট কার্যালয়ে আবেদন ফরম জমা দেন। এর সঙ্গে তাঁর জন্মসনদ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সনদও রয়েছে। এমনকি আবেদন ফরমের ওপর পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপপরিচালকের সিলযুক্ত সইও রয়েছে। আবেদন ফরমটি এন্ট্রিও করা হয়। একপর্যায়ে উপপরিচালকের স্বাক্ষর ও কালি নিয়ে সন্দেহ হলে মালেককে আটক করে পাঁচলাইশ থানা-পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। একইভাবে লোহাগাড়ার ঠিকানা দিয়ে গত ১৭ জুলাই আসিয়া বেগম ও ১৩ জুন আলেমা খাতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। একপর্যায়ে তাঁরা রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এভাবে পাঁচ মাসে রোহিঙ্গা সন্দেহে ২৯ জনকে আটক করে পুলিশের কাছে দেওয়া হয়। তবে এসব ঘটনায় কোনো মামলা না করে তাদের রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

পাঁচলাইশের আঞ্চলিক কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক আল আমিন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যগত গড়মিল ও সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় এবং ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করায় রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্তদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

পাসপোর্ট অফিস মামলা করে না কেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত করে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে।

পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে পাওয়া রোহিঙ্গাদের শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহাদাত হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাসপোর্ট কার্যালয়ের কেউ বাদী হয়ে মামলা করেন না। পুলিশ মামলা করবে না কেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এখন থেকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

পাঁচলাইশের মতো মনসুরাবাদ কার্যালয় থেকেও গত পাঁচ মাসে ৫০ রোহিঙ্গাকে স্থানীয় ডবলমুরিং থানা-পুলিশকে দেওয়া হয়। এর মধ্যে গত ২২ আগস্ট সুমাইয়া আক্তার, ২৮ আগস্ট সোনা মিয়া ও ১২ সেপ্টেম্বর শফিউল হাই নামের তিন রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা করে ডবলমুরিং থানা-পুলিশ। বাকিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা কার্যালয়ের পরিচালক আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের ভাষাগত ও আচার-আচরণের সঙ্গে মিল থাকায় সহজে ধরা যায় না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির দালালের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা কখনো ভুয়া আবার কখনো ‘প্রকৃত সনদ’ নিয়ে পাসপোর্ট করতে আসছে। ইতিমধ্যে তাঁরা তিন রোহিঙ্গাসহ চারজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন।

কেবল তিনটি মামলা কেন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি যোগ দেওয়ার পর পুলিশকে অনুরোধ করে মামলা করিয়েছেন। আগের বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।

মামলা না করে কেন রোহিঙ্গাদের শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে নগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান তাঁর কার্যালয়ে গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, পাসপোর্ট কার্যালয়ের কেউ বাদী হলে ভালো হয়। না হলে পুলিশ করবে। পাসপোর্ট করতে আসা রোহিঙ্গাদের নামে মামলা করার জন্য পাঁচলাইশ ও ডবলমুরিং থানার দুই ওসিকে এই প্রতিবেদকের সামনে মুঠোফোনে নির্দেশ দেন পুলিশ কমিশনার।