
গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের কারণে দেশে আইএসপন্থী গোষ্ঠীটি অনেকটাই বিপর্যস্ত বলে দাবি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে এখনো বড় হুমকি হয়ে আছে বিদেশে থাকা জঙ্গিরা। এদের একটা অংশ দেশ থেকে আইএস (ইসলামিক স্টেট) জঙ্গিদের হয়ে যুদ্ধ করতে সিরিয়ায় গেছে। অন্য অংশ বিভিন্ন দেশ থেকে সিরিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জঙ্গি। সংখ্যায় এরা এক শর মতো।
সিরিয়ায় আইএসের পতনের পর এখন আফগানিস্তানে আইএসের প্রসার ঘটছে। সিরিয়ায় থাকা বিদেশি জঙ্গিরা আফগানিস্তানমুখী হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বের হচ্ছে। এই স্রোতে বাংলাদেশি জঙ্গিরাও থাকতে পারে বলে আশঙ্কা আছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশি জঙ্গিরা অপ্রচলিত পথে দেশে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। অতীতে বাংলাদেশি জঙ্গিদের আফগানিস্তানে যাতায়াতের নজির আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও কেউ কেউ আফগানিস্তানে গেছে, সেখানে মারাও গেছে। আবার যাওয়ার প্রস্তুতির সময় গ্রেপ্তারও হয়েছে কয়েকজন।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মাধ্যমে এ পর্যন্ত যেসব তথ্য প্রকাশ পেয়েছে, তাতে দেশি ও প্রবাসী মিলে শতাধিক জঙ্গি সিরিয়ায় গেছে বলে ধারণা করা হয়। প্রথম আলো এমন ৭৫ জন নারী-পুরুষের নাম পেয়েছে, যাদের মধ্যে ৪০ জন বাংলাদেশ থেকে গেছে। বাকিরা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অন্য দেশের নাগরিক। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ৪০ জনের মধ্য ৭ জন আফগানিস্তানে গেছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ থেকে ঠিক কতজন সিরিয়া গেছে, তাদের কতজন মারা গেছে, জীবিতরা কে কোথায় আছে; তার পরিপূর্ণ হিসাব বা তথ্য বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। ঢাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, পশ্চিমাদের একটি দেশের কাছে প্রবাসী সন্ত্রাসবাদী যোদ্ধাদের (ফরেন টেররিস্ট ফাইটার্স বা এফটিএফ) যে তালিকা রয়েছে, তাতে সিরিয়া যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা ৪০ জনের ওপরে। মূলত ২০১৪-১৫ সালে এরা দেশ ত্যাগ করে।
একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে কেউ কেউ আফগানিস্তানেও গেছে বলে তথ্য আছে এ দেশের গোয়েন্দাদের কাছে। তবে সংখ্যায় তারা কম।
সিরিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে ১১ জনের নিহত হওয়ার খবর বিভিন্ন সময় প্রকাশ পেয়েছে। যারা জীবিত আছে, তারা সিরিয়ার ভেতরে বা তুরস্কের সীমান্তবর্তী কোনো এলাকায় আছে বলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। সেখান থেকে কেউ কেউ আফগানিস্তান, ফিলিপাইন বা অন্য কোনো দেশে গেছে বা যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। এর বাইরে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অনেকে সিরিয়া গেছে। সিরিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩৫ জনের নাম বিদেশি গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন উন্মুক্ত সূত্র থেকে জানা গেছে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এসব বিদেশি নাগরিককে নিয়েও উদ্বেগ আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে। কারণ, এসব জঙ্গির কারও কারও সঙ্গে এ দেশের জঙ্গিদের যোগাযোগ বা যোগসূত্র রয়েছে। সামিয়ুন রহমান ওরফে ইবনে হামদান নামে এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক তুরস্ক থেকে বাংলাদেশে এসে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় গ্রেপ্তার হন। তখন পুলিশ বলেছিল, সামিয়ুন সদস্য সংগ্রহের জন্য চেষ্টা করছিলেন। এই সামিয়ুন পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ভারতে পালিয়ে যান। তিনি গত বছরের সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে আবার ধরা পড়েন। বাংলাদেশে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরীও ছিলেন এমন একজন জঙ্গি, যিনি কানাডার নাগরিক। তিনি ওই দেশ থেকে সিরিয়া যান, আবার কানাডা ফেরেন। এরপর বাংলাদেশে এসে আইএস মতাদর্শী নতুন জঙ্গিগোষ্ঠী গড়ে তোলেন। এদেশীয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবির অনেকে তামিমের দলে যোগ দেওয়ায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর নাম দিয়েছে নব্য জেএমবি। যদিও ওই সংগঠনের জঙ্গিরা নিজেদের আইএস দাবি করে এবং তাদের হত্যাযজ্ঞের প্রতিটি ঘটনায় আইএসের নামে দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। হোলি আর্টিজানে হামলার পর তামিম নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মারা যান।
ওজাকির নেটওয়ার্কে সিরিয়া যাত্রা
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে যারা সিরিয়া গেছে তাদের একটা অংশ গেছে জাপানপ্রবাসী সাইফুল্লাহ ওজাকি ওরফে আবু মুসার সূত্রে (নেটওয়ার্ক)। এরা মূলত বিভিন্ন ক্যাডেট কলেজে পড়ালেখা করেছে। ওজাকি সিলেট ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলেন। তখন তাঁর নাম ছিল সুজিত দেবনাথ, বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। পরে তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে সাইফুল্লাহ ওজাকি নাম ধারণ করেন। তিনি জাপানে উচ্চশিক্ষা শেষে সে দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। বিয়েও করেছেন জাপানি নাগরিক। ওজাকি ফেসবুকে ক্যাডেট কলেজকেন্দ্রিক একটি পেজ খুলে আইএসের মতাদর্শ প্রচার করতেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে সিরিয়া যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের আর্থিকভাবেও সহায়তা করেছেন বলে জানা গেছে। ওজাকির মাধ্যমে সিরিয়া গিয়ে পরে দেশে ফিরেছেন ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র গাজী কামরুস সালাম ওরফে সোহান নামের একজন প্রকৌশলী। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
গাজী কামরুস সালামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানতে পেরেছে, সাইফুল্লাহ ওজাকির সূত্রে সিরিয়া গেছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. মহিবুর রহমান। মহিবুরও সিলেট ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলেন। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র মেরিন ইঞ্জিনিয়ার নজিবুল্লাহ আনসারীও একই সূত্রে সিরিয়া গেছেন। নজিবুল্লাহ নিহত হয়েছেন বলে শুনেছেন গাজী কামরুস সালাম।
ওজাকির সূত্রে ঠিক কতজন বাংলাদেশি আইএসে উদ্বুদ্ধ হয়ে সিরিয়া গেছে তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৫ সালের মে মাসে সিরিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, এমন দুজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা ওজাকির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। তখন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ওই গ্রুপে অন্তত ২৪ জন সিরিয়া যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, যারা ক্যাডেট কলেজে পড়ালেখা করেছে। এদের যাত্রা পরে ঠেকানো হয়।
ওজাকি এখন ফিলিপাইনে
সাইফুল্লাহ ওজাকি নিজেও জাপানি স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তান নিয়ে সিরিয়া যান। জাপানের গণমাধ্যমের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, সিরিয়ায় আইএসের কথিত রাজধানী রাকার পতনের আগেই ওজাকি সিরিয়া থেকে বেরিয়ে বুলগেরিয়া চলে যান। মাস তিনেক আগে জাপানি পুলিশ জানতে পেরেছেন, ওজাকি সপরিবার ফিলিপাইনের মিন্দানাও এলাকায় আছেন।
গুরুত্বপূর্ণ তাজউদ্দিন
তবে ঝুঁকি বিবেচনায় ওজাকির চেয়ে এ টি এম তাজউদ্দিন বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত কর্মকর্তারা। লক্ষ্মীপুরের তাজউদ্দিন অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা শেষে ওই দেশেই বিয়ে করেন। সেখান থেকে ইউরোপের একটি দেশ হয়ে তিনি সস্ত্রীক সিরিয়া যান। তাজউদ্দিনের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গিদের যোগাযোগ আছে বলে ধারণা করা হয়। তাঁর মতো অস্ট্রেলিয়া থেকে আরও কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ সিরিয়া গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুইডেনপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক তাসনিম খলিল প্রবাসী সন্ত্রাসবাদী যোদ্ধাদের নিয়ে তথ্যানুসন্ধান করেন। এখন পর্যন্ত তাঁর সংগ্রহ করা তালিকা অনুযায়ী, সিরিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা ৩৬। তাদের মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশি ২০ জন; যার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ৬ জন, যুক্তরাজ্যের ৭, কানাডার ৩, ফিনল্যান্ডের ২, জাপানের ১ এবং মালয়েশিয়া থেকে ১ জন করে আছে।
বেশি গেছে তামিমের সূত্রে
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে যেসব নারী-পুরুষ সিরিয়া গেছে বড় অংশই গেছে হোলি আর্টিজান হামলায় নেতৃত্বদানকারী তামিম চৌধুরীর সূত্রে। এমনকি বাংলাদেশি রিফাত হোসেন খানও তামিমের সূত্রে ২০১৪ সালে সিরিয়ায় যান। ২০১৫ সালের আগস্টে রিফাতের ছবি আইএস তাদের নিজস্ব অনলাইনে প্রকাশ করে। আইএসের দাবি ছিল, তাঁর নাম আবু আবদুল্লাহ আল-আমরিকি। তিনি মার্কিন নাগরিক। ইরাকের রাজধানী বাগদাদের ১৩০ মাইল উত্তরে একটি তেল শোধনাগারে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালিয়েছেন তিনি। যার কারণে আত্মঘাতী মার্কিন নাগরিক হিসেবে তাঁর নাম ও ছবি বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল তখন। পরে ওই ছবি মিলিয়ে এবং দেশে পারিবারিক সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ওই আবু আবদুল্লাহ আল-আমরিকি আসলে ঢাকার বনানীর রিফাত। ২০১৩ সালের অক্টোবরে তামীম চৌধুরী বাংলাদেশে আসার পর এই রিফাতই বনানী-গুলশানকেন্দ্রিক উগ্রপন্থী তরুণদের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ স্থাপন করিয়ে দেন তাঁকে। পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ তথ্য পায়।
সিরিয়ার রাকায় নিহত আশিকুর রহমান জিলানীও ওই দেশে গিয়েছিলেন তামিম চৌধুরীর সূত্রে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র জানায়, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ছাত্র জাফরান হাসানের (অভিজিৎ হত্যা মামলার আসামি) মাধ্যমে আশিকুর রহমান জিলানীর সঙ্গে তামিম চৌধুরীর পরিচয় হয়েছিল। বিডিআর বিদ্রোহে নিহত কর্নেল মসিউর রহমানের ছেলে জিলানী মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পড়তেন এমআইএসটিতে। তিনি ডিওএইচএস এলাকায় ছাত্রদের প্রাইভেট পড়াতেন। জিলানীর মাধ্যমে অনেকে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন, কেউ কেউ ঘর ছেড়েছিলেন আবার ভুল বুঝতে পেরে ফিরেও এসেছেন। এমন তরুণদের জিজ্ঞাসাবাদে যুক্ত একটি সূত্র জানায়, ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া ঢাকার উচ্চবিত্তের সন্তানদের নব্য জেএমবিতে ভেড়ানোর ক্ষেত্রে জিলানী ও রিফাতের যোগসূত্র তামিমের জন্য বড় সহায়ক ছিল। এদের একটা অংশকে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় ব্যবহার করেছিলেন তামিম।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন সিরিয়ায় আইএসের শীর্ষ দশজনের একজন হিসেবে যে বাংলাদেশির কথা বলেছিল, সেই সাইফুল হক ওরফে সুজনের সঙ্গেও তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তিনি তামিমের জন্য ৫০ হাজার ডলারও পাঠান। যুক্তরাজ্যে লেখাপড়া করা এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক ব্যবসা করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হওয়া সাইফুল ২০১৪ সালের আগস্টে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানসহ বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক হয়ে সিরিয়া যান। সেখানে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন বিমান হামলায় তিনি নিহত হন বলে পরে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়।
জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সিরিয়ায় আইএসের কথিত খিলাফতের পতন হওয়ায় সেখানকার বিদেশি জঙ্গিরা যার যার দেশে ফেরার চেষ্টা করবে বা সুবিধাজনক অন্য কোনো দেশে যেতে চাইবে। এ অবস্থায় বিদেশে থাকা জঙ্গিরা দেশীয় জঙ্গিদের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হলে বা এখানে কার্যক্রম বিস্তারের চেষ্টা করলে তা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা বিশ্বেই এফটিএফ বা প্রবাসী জঙ্গিদের নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। তবে আমাদের স্বস্তির বিষয়, অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে কম লোক সিরিয়া গেছে। যারা গেছে, তাদের অনেকে মারা গেছে। তারপরও যারা জীবিত আছে তারা যাতে দেশে ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাই সতর্ক আছেন।’ তিনি জানান, ইন্টারপোল সারা দুনিয়ার বিদেশি জঙ্গিদের নিয়ে একটা তথ্যভান্ডার তৈরি করছে। তারা সেটা সব দেশকে দেবে এবং তা অনেক কাজে দেবে।
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া জঙ্গিরা
বগুড়ার ব্যারিস্টার এ কে এম তাকিউর রহমান ও স্ত্রী রিদিতা রাহেলা, কুমিল্লার জুন্নুন শিকদার, ঢাকার জোবায়দুর রহিম, ইব্রাহিম হাসান খান, জুনায়েদ হাসান খান, আশরাফ মো. ইসলাম, ডা. আরাফাত হোসেন, তাহমিদ রহমান, তাঁর স্ত্রী সায়মা খান, তৌসিফ হোসেন, ডা. রোকনুদ্দীন খন্দকার (ঢাকা), তাঁর স্ত্রী নাঈমা আক্তার, তাঁদের দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন ও রমিতা রোকন এবং জামাতা সাদ কাশিম কায়েস, আশিকুর রহমান জিলানী (নিহত), রিফাত হোসেন খান (নিহত), নাবিল বিন মুর্তাজা (নিহত), বৈমানিক ফারাজ বিন জাফর (নিহত), মির্জা মমিন উল হক, রেজওয়ানুল হক মৃধা, মো. তানভীর, তানভীর ওরফে জিম তানভীর, প্রকৌশলী গাজী কামরুস সালাম (দেশে ফিরে এখন কারাগারে), গোপালগঞ্জের সাইফুল হক ওরফে সুজন (নিহত), তাঁর স্ত্রী সায়মা আক্তার (সঙ্গে তিন শিশুসন্তান), সাইফুলের ভায়রা শরিফুল ইসলাম ওরফে ইমন, তাঁর স্ত্রী রাবেয়া আক্তার, সিলেটের কামরুজ্জামান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী (নিহত), চট্টগ্রামের নিয়াজ মোর্শেদ (নিহত) ও গাজীপুরের মো. মহিবুর রহমান সিরিয়া গেছেন। আর আফগানিস্তানে গেছেন ঢাকার ইফতেখার আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, সৈয়দ ফয়জুর রহমান, মায়মুন হাছিব মুনাজ (নিহত), মুনাজের বন্ধু নাজিম উদ্দিন (নিহত), সাইফুল হাসান (নিহত) ও তারিক সোহেল (নিহত)।বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসী যারা গেছেন
জাপান থেকে মো. সাইফুল্লাহ ওজাকি, অস্ট্রেলিয়ার এ টি এম তাজউদ্দিন, ফিনল্যান্ড থেকে তাজ রহমান (নিহত), মো. রোকন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আতাউল হক সরকার, কানাডা থেকে তাবিরুল হাসিব, আবদুল মালিক ও তামিম চৌধুরী সিরিয়া যান। তামিম পরে বাংলাদেশে এসে জঙ্গি দল করেন, হোলি আর্টিজান বেকারিসহ বেশ কিছু হামলা ও হত্যার পরিকল্পনাকারী ছিলেন তিনি। পরে পুলিশের অভিযানে নিহত।
যুক্তরাজ্য থেকে মোহাইমেন বক্স, ইফতেখারুজ্জামান (নিহত), খাদিজা সুলতানা (নিহত), শামীমা বেগম, সামিয়ুন রহমান (সিরিয়া থেকে বাংলাদেশে এসে গ্রেপ্তার। জামিন পেয়ে ভারতে গিয়ে আবার গ্রেপ্তার), শিশু মিয়া, মামুন রশিদ, মোহাম্মদ জাকির, মোহাম্মদ হাসান, আসাদুজ্জামান এবং এক পরিবারের ১৩ জন সিরিয়া যান। এই পরিবার যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটের গ্রামের বাড়ি আসে, তারপর সিরিয়া গেছে।আরও পড়ুন