Thank you for trying Sticky AMP!!

লাশের পাশে পাওয়া চকলেটে খুলল জট

প্রতীকী ছবি

সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ। পরদিন বাঁশবাগানে মেলে লাশ, সঙ্গে ধর্ষণের আলামত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে জয়নব আক্তার ধর্ষণ ও হত্যার এই ঘটনায় কোনো সূত্রই খুঁজে পাচ্ছিল না পরিবার বা পুলিশ। অবশেষে এই ঘটনার জট খুলেছে লাশের পাশে পড়ে থাকা চকলেটে। গ্রামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, চকলেটের প্রলোভন দেখিয়েই ওই ব্যক্তি শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। পরে ধরা পড়ার ভয়ে তাকে হত্যা করে গা–ঢাকা দেন।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম মোবারক মিয়া ওরফে কানাই মিয়া (৫০)। সরাইল উপজেলা সদরের পশ্চিম কুট্টাপাড়া গ্রামে তাঁর মুদি দোকান রয়েছে। ধর্ষণ ও হত্যার শিকার জয়নবের (১০) বাড়ি থেকে দোকানটি মাত্র ৫০ মিটার দূরে অবস্থিত। 

পরিবার ও পুলিশ জানায়, নিহত জয়নব পশ্চিম কুট্টাপাড়া গ্রামের আবদুল হাফিজের মেয়ে। সে পশ্চিম কুট্টাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। গত সোমবার সন্ধ্যার পর জয়নব প্রতিবেশী এক স্বজনের বাড়িতে যায়। ঘটনার সময় এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। পরে জয়নব আর বাড়িতে ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও স্বজনেরা তার সন্ধান পাননি। পরদিন বাড়ি থেকে ২০০ মিটার দূরে অবস্থিত একটি বাঁশঝাড় থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে, কিন্তু পরিবার কাউকে সন্দেহ করতে পারছিল না। কারণ, কারও সঙ্গে পরিবারটির কোনো বিরোধ নেই। ফলে জয়নবের মা ফেরদৌসী বেগম (৩৮) বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে অজ্ঞাতনামা আসামির নামে সরাইল থানায় মামলা করেন। মামলায় জয়নবকে অপহরণ করে জোরপূর্বক ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ করা হয়।

ঘটনাটি যে ধর্ষণ শেষে হত্যা, তা ময়নাতদন্তেও পরিষ্কার হয়; কিন্তু পুলিশ ঘটনার কোনো সূত্র খুঁজে পাচ্ছিল না। তবে লাশ উদ্ধারের সময় পাশে একটি চকলেট পায় পুলিশ। এর সূত্র ধরে তদন্ত করতে শুরু করে তারা। পরে দেখা যায়, ঘটনার পর থেকে মুদিদোকানি মোবারক মিয়া এলাকায় নেই। পুলিশ জানতে পারে, মোবারক ইতিমধ্যে পাঁচটি বিয়ে করেছেন। তবে চারিত্রিক সমস্যার কারণে কোনো বিয়েই বেশি দিন টেকেনি। বর্তমানে তাঁর ঘরে কোনো স্ত্রী-সন্তান নেই।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এমন বেশ কয়েকটি বিষয়ের কারণে মোবারকের প্রতি পুলিশের সন্দেহ বাড়ে। পুলিশ গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বড়ইবাড়ি গ্রামের রাস্তা থেকে তাঁকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনা তিনি একাই ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। মোবারককে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হয়। সেখানে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়ার পর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মোবারকের বরাত দিয়ে পুলিশ বলেছে, দুই বছর ধরে মোবারক বাড়ির অদূরে ওই দোকানে মুদি ব্যবসা করে আসছেন। কয়েক মাস ধরেই শিশু জয়নবের ওপর তাঁর নজর পড়ে। তিনি মাঝেমধ্যেই চকলেট দিয়ে শিশুটিকে প্রলুব্ধ করে আসছিলেন। শিশুটি তাঁকে দাদা সম্বোধন করত। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর জয়নবকে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে নিজ ঘরে নিয়ে যান মোবারক। সেখানে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করেন। এরপর তাঁর মাথায় আসে এ ঘটনা জানাজানি হয়ে যেতে পারে। ভয় পেয়ে তিনি ঘরের ভেতরেই জয়নবকে হত্যা করেন। পরে রাতের আঁধারে লাশটি বাঁশঝাড়ে নিয়ে গিয়ে ফেলে রাখেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লাশটি উদ্ধার হওয়ার পরপরই তিনি গা–ঢাকা দেন।

জয়নবের বাবা আবদুল হাফিজ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা মোবারকের ফাঁসি চাই। এভাবে আর কারও বুক খালি হোক, আমরা চাই না।’