‘ইউরেনিয়াম’ কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাঁদের একজনের কাছ থেকে একটি চামড়ার বড় ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ব্যাগের মধ্যে দুই পাউন্ড ওজনের ইউরেনিয়াম রয়েছে। তবে বাক্সের ভেতরে আদৌ কী আছে, সে বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত নয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ময়নাল হোসেন ওরফে সাগর (৪৫), হুমায়ুন কবীর (৪৮), কাইয়ুম চৌধুরী (৫৪), কায়েশ আহম্মেদ (৫৪), মো. খালেক (৪৪), স্বপন মোল্লা (৪৫), মো. ফিরোজ (৪৫), মাহফুজুর রহমান নাসিম (৪২), আসলাম মিয়া (৬১), মইনউদ্দীন সরোয়ার রাজন (৩৫) ও তোফায়েল আহম্মেদ পাটোয়ারি (৪৮)।
এ বিষয়ে আজ রোববার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে একটি বড় চামড়ার ব্যাগ সাংবাদিকদের দেখানো হয়। ওই ব্যাগের ভেতরের একটি বাক্সে কথিত সেই ইউরেনিয়াম রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। ব্যাগের সঙ্গে গ্যাস-মাস্ক, বিকীরণ (রেডিয়েশন) মাপার যন্ত্র, তাপমাপক যন্ত্র, বিকীরণ রোধক জ্যাকেট, হাতমোজা এবং ইংরেজি ও রাশিয়ান ভাষায় লেখা কিছু ক্যাটালগ রয়েছে। এগুলো ওই বাক্সেই ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উপকমিশনার (দক্ষিণ) কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেপ্তার আসলাম মিয়ার বনানীর বাসা থেকে ওই কথিত ইউরেনিয়ামের ব্যাগটি উদ্ধার করা হয়। বাক্সের সঙ্গে থাকা ক্যাটালগে ইউরেনিয়াম ইটমিক ওয়েট-২২২.০৭ (এ) লেখা রয়েছে।
উপকমিশনার জানান, আসামিরা দাবি করেছেন, এর ওজন প্রায় দুই পাউন্ড, যার বাজারমূল্য ৫০ কোটি টাকা। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ধনীদের কাছে গিয়ে ইউরেনিয়ামের আন্তর্জাতিক চাহিদা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে লোভে ফেলার চেষ্টা করতেন। লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কোটি টাকা মিলবে বলেও লোভ দেখাতেন তাঁরা। বিভিন্ন বিদেশি গবেষণাগার এগুলো কিনতে সদা প্রস্তুত বলে তাঁরা ওই ব্যক্তিদের ইউরেনিয়ামে বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট করেন। তাঁরা প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য ক্রেতাকে একটি ভিডিও দেখান। ক্রেতার ৫০ লাখ টাকা আছে নিশ্চিত হলে তাঁরা ইউরেনিয়ামের সুদৃশ্য চামড়ার ব্যাগটি দেখান। আর বাক্সটির সঙ্গে থাকা যন্ত্রপাতি ও রাশিয়ান ও ইংরেজি ভাষার ক্যাটালগ দেখে অনেকে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। এভাবে কয়েকজন ক্রেতা কিছু টাকা বিনিয়োগ করার পর গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
পুলিশ জানায়, ছয় মাস আগে ঢাকার বাইরে থেকে চক্রটি ওই কথিত ইউরেনিয়ামের বাক্সটি সংগ্রহ করে। বিদেশ থেকে বাক্সটি আনা হয়েছে বলে জানালেও কোন দেশ থেকে সেটি এসেছে, তা জানায়নি পুলিশ।
বিভিন্ন সময় প্রতারকেরা ‘ব্রিটিশ আমলের সীমানা পিলারে ইউরেনিয়াম’ আছে বলে গুজব তৈরি করে তা সংগ্রহ ও বিক্রির নামে প্রতারণা করেছে। এই চক্রটিও একই প্রক্রিয়ায় কয়েকজনকে ইতিমধ্যে প্রতারিত করেছে।
ওই চক্রটিকে গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনাকারী অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি ওই বাক্সের ভেতরে আসলে কী আছে। এগুলো পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি নিয়ে আণবিক শক্তি কমিশন অথবা অন্য কোনো পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে বনানী থানায় মামলা হয়েছে।