ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের কাছে পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে ভুক্তভোগীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। ২৮ জুলাই
ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের কাছে পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে ভুক্তভোগীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। ২৮ জুলাই

কিউকমের কর্ণধার রিপন মিয়ার সম্পদ জব্দ করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ভুক্তভোগীদের

ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রিপন মিয়া অনলাইনে চমকপ্রদ অফার দিয়ে গ্রাহকদের থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পাওনা টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রাখেননি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। এখন তাঁরা রিপন মিয়ার সম্পদ জব্দ করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা এসব অভিযোগ করেন। এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রিপন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে তিনি ৩৮০ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করেছেন। অল্প কিছু টাকা এখনো বকেয়া আছে।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে হাবিব বিন আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় শতাধিক ভুক্তভোগী উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে হাবিব বিন আবদুল্লাহ বলেন, ‘কিউকমের কর্ণধার রিপন মিয়া ফেসবুক লাইভ ও অনলাইনে ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ চমকপ্রদ অফার দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন। এরপর পণ্য ৭ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে সরবরাহ করার কথা বলে অগ্রিম টাকা নেন। এতে আকৃষ্ট হয়ে ২০২০ থেকে ২০২১ সালের দিকে হাজার হাজার মানুষ পণ্য অর্ডার করেন। কিন্তু বেশির ভাগ গ্রাহক সেই পণ্য বুঝে পাননি। কিছু গ্রাহক কমিশনের মাধ্যমে সামান্য টাকা ফেরত পেলেও বেশির ভাগই এখনো টাকা ফেরত পাননি। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি চারটি আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তিনি এই টাকা নিয়েছেন। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে তিনি প্রায় ১৫০ কোটি টাকা জমা নিয়েছেন।’

রিপন মিয়া প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার পণ্যের অর্ডার নেন উল্লেখ করে হাবিব বিন আবদুল্লাহ আরও বলেন, সেই সময় সরকার পণ্য ডেলিভারি ছাড়া টাকা ছাড় করা যাবে না বলে পেমেন্ট লেনদেন পরিশোধ প্রতিষ্ঠানকে (গেটওয়ে) এমন নির্দেশ দেয়। তখনো কিউকমের গেটওয়েতে ৩৯৬ কোটি টাকা আটকে ছিল। পরে তিনি নানা কৌশলে গ্রাহকদের থেকে টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে সরাসরি জমা নেন। এমনকি গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যাংক ডিপোজিটের চেকের মূল কপিও জমা নেন। যাতে গ্রাহকদের কাছে টাকা জমা দেওয়ার কোনো প্রমাণ না থাকে। ব্যাংক ডিপোজিটের মাধ্যমে জমা নেওয়া আনুমানিক ১৬৫ কোটি টাকা এখনো গ্রাহকরা পাননি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, রিপন মিয়া কারাগার থেকে ছাড়া পেলে গেটওয়ে থেকে ৩৪৪ কোটি টাকা ছাড় করার পর গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। এখনো ৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা গেটওয়েতে আটকে আছে, যা ছাড় করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির ওয়্যারহাউসেও প্রায় ১০০ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য ছিল। সেই পণ্য বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা করা হয়নি। আইনি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গোপনে পণ্যগুলো বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।

প্রতারণার ঘটনায় রিপন মিয়া ও তাঁর সহযোগী তানভীর হাসানের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শত শত মামলা হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগে বলা হয়। ভুক্তভোগীরা রিপন মিয়ার সব সম্পদ জব্দ করে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে এই প্রতারণার পেছনের কুশীলবদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে হাবিব বিন আবদুল্লাহ আরও বলেন, রিপন মিয়া সাধারণ মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। দুটি বিলাসবহুল গাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় একটি মেগা প্রকল্পে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন, শত শত কোটি টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করেছেন। অথচ গ্রাহকেরা টাকা ফেরত চাইলে উল্টো হামলা, মামলা ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছেন। গত সরকারের প্রভাব খাটিয়ে কিছু গ্রাহকের নামে মিথ্যা মামলাও দিয়েছেন।

ভুক্তভোগীদের একজন উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। প্রতারণার শিকার হয়েছি। কয়েক বছর ধরে আমরা টাকা ফেরতের দাবি জানালেও আমাদের কথা কেউ শুনছে না। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

বাইক অর্ডার দিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়া সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বাইক অর্ডার করেছিলাম, কিন্তু সরবরাহ করা হয়নি। প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুনেছি সেই টাকা বাইরে পাচার করে পালানোর পরিকল্পনা করছেন রিপন। আমরা সরকারের কাছে তাঁর সম্পদ জব্দ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে রিপন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার প্রায় ৬০টির মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলেও কিউকম কিন্তু চালু ছিল। আমি ইতিমধ্যে ৩৮০ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করে দিয়েছি। অল্প কিছু টাকা এখনো বাকি আছে। আমাকে ব্যবসা করার সুযোগ দিলে ধীরে ধীরে সেগুলো পরিশোধ করে দেব। সরকার সে সময় বলেছিল, যাঁদের টাকা পাওনা আছে তাঁরা যেন ভোক্তা অধিকারের মাধ্যমে অভিযোগ করেন। কিন্তু আজ যাঁরা আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাঁরা সেটি না করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন।’