Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বামী বলেছিলেন আত্মহত্যা, ময়নাতদন্ত বলছে কোহিনূর খুন হয়েছেন

কোহিনূর বেগম

কোহিনূর বেগম নামের এক নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে ঘটনার তিন মাস পর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেয়ে পুলিশ জানতে পারে কোহিনূর বেগম আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

কোহিনূরের মৃত্যু নিয়ে শুরুতেই তাঁর ভাই সালাউদ্দিন রহমাতুল্লাহর সন্দেহ ছিল বলে জানা গেছে। সালাউদ্দিন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসার পরই তিনি একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় কোহিনূরের স্বামী ও তাঁর পালিত মেয়ে এখন কারাগারে।

নিহত কোহিনূর বেগম নামকরা একাধিক ওষুধ কোম্পানিতে কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসি অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর করেছিলেন। তাঁর স্বামী কে বি এম মামুন রশীদ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এবং মেয়ে ফাইজা নূর রশীদ আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশ-আইসিডিডিআরবি ঢাকার কর্মকর্তা।

কোহিনূর বেগম হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলাটি এখন তদন্ত করছে পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগ।

তদন্ত–সংশ্লিষ্ট পিবিআই সূত্র জানায়, মামুন রশীদ তাঁদের জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১০ এপ্রিল ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের নিজ বাসা থেকে কোহিনূরকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে রওনা হন। পথেই কোহিনূরের মৃত্যু হয়।

সে সময় তিনি পুলিশকে বলেছিলেন, তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ধানমন্ডির বাসায় থাকেন। তবে ঘটনার সময় সকালবেলা তিনি বাজারে ছিলেন আর দুই সন্তানই কর্মস্থলে ছিলেন। বাজার থেকে বাসায় ফিরে তিনি দরজায় তালা দেখতে পান। এরপর তিনি চাবি দিয়ে দরজা খুলে স্ত্রীকে খাবারঘরে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ঝুলতে দেখেন। এরপর তিনি সেখান থেকে কোহিনূরকে নামিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মামুন রশীদ পুলিশের কাছে দাবি করেছিলেন, বিষণ্নতায় ভুগে তাঁর স্ত্রী কোহিনূরে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

কোহিনূরের ঘনিষ্ঠজনেরা প্রথম আলোকে বলেন, বিয়ের কয়েক বছর হয়ে গেলেও কোহিনূর মা হতে পারছিলেন না। তখন তিনি ফাইজাকে দত্তক নেন। এর মধ্যেই কোহিনূর নিজে এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। কোহিনূর বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করায় দুই সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিতে পারছিলেন না। এতে একপর্যায়ে সন্তানেরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এই অবস্থা দেখে কোহিনূর চাকরি ছেড়ে দিয়ে সংসারে মনোযোগ দেন। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। ফাইজার আচরণ এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে যে সামান্য কথাতেই তিনি মায়ের গায়ে হাত তুলতেন। আর মেয়েকে বাবা মামুন রশীদ সমর্থন জোগাতেন।

পিবিআই জানায়, কোহিনূর বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর স্বামী মামুন রশীদ ধানমন্ডি থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। গত ১৫ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেয়ে ধানমন্ডি থানার পুলিশ জানতে পারে কোহিনূরকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এরপর কোহিনূরের ভাই সালাউদ্দিন রহমতুল্লাহ বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে মামুন রশীদ ও ফাইজার নাম উল্লেখ করা হয়।

মামলার বাদী সালাউদ্দিন বর্তমানে দেশের বাইরে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। নিহত কোহিনূরের ছেলে সাবীক নূর রশীদ বলেছেন, তাঁর মায়ের মৃত্যু নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাচ্ছেন না।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের অর্গানাইজড ক্রাইমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারওয়ার আলম আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, হত্যা মামলা হওয়ার পর মামুন রশীদ ও তাঁদের পালিত মেয়েকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। গত ৩ আগস্ট কোহিনূর হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান তাঁরা। ইতিমধ্যে পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ছাড়া কোহিনূরের স্বামী ও মেয়েকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত শেষে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।