ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারী ও এক পুরুষের ওপর ধারালো অস্ত্র (রামদা) দিয়ে হামলা করছেন দুজন
ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারী ও এক পুরুষের ওপর ধারালো অস্ত্র (রামদা) দিয়ে হামলা করছেন দুজন

উত্তরায় প্রকাশ্যে কোপানো

‘আমাদের চিনিস, আমরা কে’ বলে রামদা দিয়ে আঘাত করেন আলফাজ ও সাইফ

রাজধানীর উত্তরার সড়কে প্রকাশ্যে এক দম্পতির ওপর ধারালো অস্ত্র (রামদা) দিয়ে হামলার সময় হামলাকারীরা বলতে থাকেন, ‘আমাদের চিনিস? আমরা কে?’ তাঁরা একের পর এক আঘাত করেন ওই নারী ও পুরুষের ওপর। এ ঘটনায় নতুন করে আরও দুজনসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া হামলায় ব্যবহৃত দুটি রামদা উদ্ধার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও ঘটনার ভুক্তভোগীরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। গত সোমবার রাত ৯টার দিকে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর সড়কে ওই দম্পতিকে প্রকাশ্যে কোপানো হয়। ওই ঘটনা নিয়ে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

এ ঘটনায় নতুন করে গ্রেপ্তার দুজন হলেন মেহেদী হাসান সাইফ (২৪) ও সজীব (২০)। এর আগে গ্রেপ্তার করা হয় মো. মোবারক হোসেন (২৫), রবি রায় (২২) ও আলফাজ মিয়া ওরফে শিশির (২২) নামের তিন ব্যক্তিকে। এদের মধ্যে মোবারক ও রবিকে এ ঘটনায় হওয়া মামলায় আদালতের অনুমতিতে পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, রাজধানীর উত্তরা এলাকায় মেহেবুল হাসান (৩৭) ও নাসরিন আক্তার (ইপ্তি) (২৮) দম্পতিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত পুরো চক্রটিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাইফ ও সজীবকে গতকাল রাতে টঙ্গী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে যে দুজন কুপিয়েছেন তাঁরা হলেন আলফাজ ও সাইফ। গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে রবির বিরুদ্ধে আগে থেকেই মামলা ছিল।

মামলায় উঠে এল হামলার বিবরণ

হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী নাসরিন আক্তার বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় তিনি ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেছেন।

মামলার এজাহারের সূত্র ধরে ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ জানিয়েছে, গত সোমবার রাত আনুমানিক ৯টায় মেহেবুল হাসান ও নাসরিন আক্তার দম্পতি উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার আমির কমপ্লেক্স থেকে কেনাকাটা করে বাসায় ফিরছিলেন। উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর সড়কের বাসার সামনে পৌঁছালে সেখানে তিন ব্যক্তি দুটি মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে এলোমেলোভাবে চালিয়ে বিকট শব্দ করে যেতে থাকেন। তখন একটি মোটরসাইকেল সামনে থাকা একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। সে সময় রিকশায় চার বছরের একটি শিশু তার মায়ের সঙ্গে ছিল। শিশুটির বাবা রিকশা থেকে নেমে ওই মোটরসাইকেলের মোবারক হোসেনের সঙ্গে বাক্‌বিতণ্ডা শুরু করেন। এ সময় রিকশার পেছনে থাকা মেহেবুল হাসান ও নাসরিন আক্তার তাদের ঝামেলা করতে নিষেধ করেন। তখন রিকশার যাত্রীরা চলে যান।

পুলিশ জানায়, এ ঘটনার পর মোটরসাইকেলে থাকা তিনজন মেহেবুল হাসানের সঙ্গে তর্ক শুরু করেন এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারপিট শুরু করেন। এ সময় তারা বলতে থাকে, ‘আমাদের চিনিস? আমরা কে?’। সে সময় ভুক্তভোগী দম্পতি আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় আক্রমণকারী একজনকে ধরে ফেলেন এবং তাঁর মোটরসাইকেল আটক করেন। তখন তিনি (হামলাকারী) ফোন করে তার আরও কয়েকজন সহযোগীকে ডেকে নিয়ে আসেন। তারা রামদাসহ ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত জনসাধারণের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করেন। রামদা দিয়ে মেহেবুল হাসানকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। এ সময় নাসরিন আক্তার তাঁর স্বামীকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাঁকেও রামদা দিয়ে আঘাত করেন। এতে ওই দম্পতির শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। খবর পেয়ে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের টহল দল ঘটনাস্থলে যায়। তারা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় মোবারক হোসেন ও রবি রায়কে গ্রেপ্তার করেন। পুলিশ আহত দম্পতিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। বর্তমানে তাঁরা সেখানে চিকিৎসাধীন।