Thank you for trying Sticky AMP!!

‘নিখোঁজ’ আমিনুল মারা গেছেন বান্দরবানে জঙ্গি আস্তানায়, কবর খুঁড়ে পাওয়া যায়নি লাশ

মো. আমিনুল ইসলাম

উগ্রবাদে জড়িয়ে ঘর ছেড়ে যাওয়া কুমিল্লার সাত তরুণের একজন মো. আমিনুল ইসলাম ওরফে আল আমিন (২৩) বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানায় মারা গেছেন। তাঁর সঙ্গে থাকা পাঁচ তরুণ পাহাড়েই আল আমিনকে দাফন করেন। তাঁর সঙ্গে ঘর ছেড়ে যাওয়া আরেক তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই কবর শনাক্ত করে র‌্যাব। আল আমিনের বাবাকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল রোববার ওই কবর খোঁড়া হয়। কিন্তু কবরে লাশ পাওয়া যায়নি, কেবল একটি কম্বল পাওয়া গেছে।

র‌্যাব সূত্র বলছে, অভিযানের মুখে পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের কয়েকজনকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে র‌্যাব জানতে পেরেছে আল আমিন ২৫ নভেম্বর মারা গেছেন। তাঁকে কম্বল পেঁচিয়ে দাফন করে সঙ্গীরা।

তবে আল আমিনের বাবা মো. নুরুল ইসলাম মনে করেন, তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর ছেলে ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসতে চেয়েছিল, সে জন্য অন্য জঙ্গিরা তাঁকে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে তিনি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

Also Read: বান্দরবানের দুর্গম এলাকা থেকে ৫ জঙ্গি গ্রেপ্তার

নুরুল ইসলাম এখন বান্দরবানে আছেন। তিনি আজ বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আল আমিনের সঙ্গে জঙ্গি আস্তানায় যাওয়া কুমিল্লার আরেক তরুণ ইমরান বিন রহমান ওরফে শিথিল ধরা পড়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে শিথিল র‌্যাবকে জানিয়েছে আল আমিন কীভাবে মারা গেছে। র‌্যাবের কাছ থেকে এ তথ্য জানতে পেরে গত শুক্রবার নুরুল ইসলাম তাঁর স্ত্রী ও এক আত্মীয়কে নিয়ে বান্দরবার যান। এরপর রোববার নুরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে র‌্যাব ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু কবর খুঁড়ে লাশ পাওয়া যায়নি। নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, কবরের আশপাশে কিছু স্যান্ডেল, জামাকাপড় ও হাঁড়িপাতিল পড়ে ছিল।

Also Read: কেএনএফের ক্যাম্পে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রথম আলোকে বলেন, হিজরতের নামে ঘরছাড়া আল আমিনের কবরে লাশ পাওয়া যায়নি। তবে কবর খুঁড়ে কম্বল ও কাপড় পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কবর থেকে কেউ লাশ সরিয়ে ফেলেছে। জঙ্গিরা, নাকি পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের লোকজন তাঁর লাশ সরিয়ে ফেলেছে, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

কুমিল্লার সাত তরুণ গত ২৩ আগস্ট একযোগে নিখোঁজ হন। তাঁদের বয়স ১৮ থেকে ২৩ বছর। নিখোঁজ তরুণেরা হলেন মো. ইমতিয়াজ আহম্মেদ ওরফে রিফাত, নিহাল আবদুল্লাহ, মো. আমিনুল ইসলাম ওরফে আল আমিন, সরতাজ ইসলাম ওরফে নিলয়, ইমরান বিন রহমান ওরফে শিথিল, মো. হাসিবুল ইসলাম ও আস সামী। শেষ তিনজন উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার্থী ছিলেন। এই বিষয়ে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন কয়েকজনের অভিভাবক।

Also Read: জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ‘হিজরত’, ঘর ছেড়েছেন সাত তরুণ

নিখোঁজ সাত তরুণের মধ্যে আল আমিন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে স্নাতকের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বড় আলমপুর গ্রামে। তাঁরা কুমিল্লা শহরের ঝাউতলায় থাকতেন। আল আমিনের বাবা মো. নুরুল ইসলাম গত ১ সেপ্টেম্বর থানায় ছেলে নিখোঁজ হওয়ার জিডি করেন।

Also Read: কথিত হিজরত থেকে ফেরা শারতাজ বললেন, ‘এটা ভুল পথ’

নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিখোঁজের সময় আল আমিনের পরনে হলুদ রঙের পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা ছিল। এরপর বিভিন্ন স্থানে ছেলের সন্ধানে যোগাযোগ করি। আইনশৃঙ্খলা  রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ করি। ১৫ দিন আগে র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা আমাকে ফোন করে জানান যে আমার ছেলে মারা গেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে বিস্তারিত জানতে পারব। তিন দিন আগে ঘর ছাড়া কুমিল্লার শিথিলসহ কয়েকজনকে বান্দরবানে র‌্যাবে গ্রেপ্তার করে। শিথিল জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানায় আল আমিন বান্দরবানের রুমা উপজেলার গহিন অরণ্যে না খেয়ে, রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৫ নভেম্বর শুক্রবার মারা গেছেন। সেদিন দুপুরে তাঁরা আল আমিনকে দাফন করেন।’

Also Read: ‘নিখোঁজ’ এত তরুণ গেল কোথায়

আল আমিনের বাবা আজ সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুমা থেকে হেঁটে গহিন অরণ্যে যেখানে আল আমিনের কবর সেখানে যাই। এ সময় ইউএনও, র‌্যাব, পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। আমাদের সঙ্গে গ্রেপ্তার শিথিলকেও নেওয়া হয়। সে আল আমিনের কবর দেখিয়ে দেয়।’  

Also Read: ৭ তরুণের ‘হিজরতের’ নেপথ্যের ব্যক্তিও ‘নিখোঁজ’

আল আমিনকে যাঁরা ‘ফুঁসলিয়ে’ এ পথে নিয়ে গেছেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান কুমিল্লা শহরের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার আদরের বড় ছেলে। এত কষ্ট হচ্ছে। ছেলের লাশও পেলাম না। এক বুক কষ্ট নিয়ে কুমিল্লায় ফিরে যেতে হচ্ছে। ওর মাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না।’

Also Read: সাত তরুণের খোঁজ নেই, অপর চারজন উদ্ধার