আফরিন সুলতানা
আফরিন সুলতানা

মুগদায় নিজের বাসা থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, গ্রেপ্তারের পর স্বামী কারাগারে

রাজধানীর মুগদা থানার দক্ষিণ মান্ডায় আফরিন সুলতানা ওরফে দিবা (২৪) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার বিকেলে দক্ষিণ মান্ডা প্রথম গলির একটি ভবনের সপ্তম তলা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

আফরিনের পরিবারের অভিযোগ, আফরিনকে হত্যা করে লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছেন তাঁর স্বামী সাইফুল ইসলাম। কিন্তু পুলিশ সাইফুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা গ্রহণ করেনি।

তবে পুলিশ জানিয়েছে, আফরিনের স্বামী সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা গ্রহণ করে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে হত্যার আলামত পাওয়া গেলে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে।

পুলিশ ও আফরিনের পারিবারিক সূত্র জানায়, সাত বছর আগে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আফরিনের বিয়ে হয়। তাঁদের প্রায় দুই বছর বয়সী এক পুত্রসন্তান রয়েছে। সাইফুল ইসলাম সপরিবার দক্ষিণ মান্ডা প্রথম গলির একটি ভবনের সপ্তম তলায় ভাড়া থাকতেন।

বুধবার আফরিনের সঙ্গে সাইফুলের ঝগড়া হয়। ওই দিন বিকেলে সাইফুল আফরিনের বাবার বাসায় গিয়ে তাঁর বাবা আনোয়ারুল ইসলামকে বলেন, আফরিন সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এরপর আনোয়ারুল ইসলাম মুগদা থানায় জানালে পুলিশ এসে আফরিনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।

আফরিনের বাবা মুহম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আফরিনের সঙ্গে বিয়ের পর তারা জানতে পারেন, সাইফুল বেকার ও মাদকাসক্ত। সংসার চালানোর জন্য আফরিনকে চাপ দিয়ে প্রতি মাসে তাঁর কাছ (আনোয়ারুল) থেকে টাকা নিতেন। এ ছাড়া নেশার টাকা এনে দেওয়ার জন্য আফরিনকে মারধর করতেন সাইফুল। অন্য নারীর সঙ্গেও সাইফুলের সম্পর্ক ছিল।

আনোয়ারুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আফরিনকে পিটিয়ে হত্যা করে তাঁর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজান সাইফুল। এ ব্যাপারে মুগদা থানায় সাইফুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা নেয়। তিনি বলেন, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার কথা বলা হলেও আফরিনের পায়ের পাতা খাটের ওপরে লাগানো ছিল। তা ছাড়া পুলিশ শোবারঘর থেকে লাশ উদ্ধারের সময় কক্ষের দরজা আগে থেকেই খোলা ছিল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, আফরিনের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে ওই ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই। সে কারণে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে সাইফুলের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার করে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আফরিনের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ ‘হত্যাকাণ্ড’ উল্লেখ থাকলে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে করা মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে।