
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় আরও দুই আসামিকে এবং ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মামলায় একজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের আদালত পৃথক এ আদেশ দেন। এ নিয়ে প্রথম আলোর মামলায় ১৯ জনকে এবং ডেইলি স্টারের মামলায় ১০ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আজ কারাগারে পাঠানো তিন আসামি হলেন ময়মনসিংহের জাকির হোসেন শান্ত (২৯), ভোলার নিয়াজ মাহমুদ ফারহান (২১) ও আজমির হোসেন আকাশ (২৭)। তাঁদের মধ্যে শেষের জনকে ডেইলি স্টারের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আসামিদের আদালতের হাজখানায় আনা হয়। পৌনে সাতটার পর আদালতে তোলা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা তাঁদের কারাগারে রাখার আবেদন করেন। প্রথম আলোর মামলায় দুই আসামির পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। আদালত তা নামঞ্জুর করে ৩ আসামিকেই কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে ২১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলাটি করা হয় সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে।
মামলায় দাঙ্গা সৃষ্টি করে অবৈধভাবে কার্যালয়ে ঢুকে লুটপাট, ক্ষতি করা, হত্যার উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগ, ভয় দেখানো, অপরাধের প্রমাণ নষ্ট করার অভিযোগ করা হয়। পাশাপাশি প্রথম আলো পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ ও অফিসের কাজে বাধা দিতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, অনলাইনে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নির্দেশনা দেওয়া ও অন্তর্ঘাতমূলক কাজের অভিযোগ আনা হয়েছে।
হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সময় শুধু লুটপাট করা সম্পদের মূল্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এজাহারে প্রথম আলো আরও জানিয়েছে, সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩২ কোটি টাকা। এ হামলার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।
আর ডেইলি স্টারের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির হেড অব অপারেশন মো. মিজানুর রহমান ২২ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলায় ৩৫০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টা ৩৫ মিনিটে লাঠিসোঁটা ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে একদল হামলাকারী উসকানিমূলক স্লোগান দিতে দিতে ভবনে প্রবেশ করে। হামলাকারীরা ডেইলি স্টারের কর্মীদের ওপর শারীরিকভাবে আক্রমণ চালিয়ে নগদ অর্থ, বিভিন্ন সরঞ্জাম লুট করাসহ ভবনের একাধিক তলায় আগুন ধরিয়ে দেয় এবং অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা, সিসিটিভি ক্যামেরাসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নষ্ট করে।
এ ঘটনায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ২০০টির বেশি ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং ৩৫ লাখ টাকা নগদ অর্থ লুট করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
হামলার সময় ৩০ জন কর্মীকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার কারণে পরদিন ডেইলি স্টারের মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশ বন্ধ রাখতে হয়। পাশাপাশি প্রায় ১৭ ঘণ্টা অনলাইন কার্যক্রম স্থগিত থাকে।