রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক

ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি

মঈনুল হক বললেন, লাইভ সম্প্রচারের সময় আবু সাঈদকে গুলির দৃশ্য ধরা পড়ে

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় আজ বুধবার পঞ্চম সাক্ষী হিসেবে সাংবাদিক এ কে এম মঈনুল হক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে মঈনুল হক বলেন, তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের লাইভে থাকার সময় আবু সাঈদকে গুলি করার দৃশ্যটি ধরা পড়ে।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আজ এই জবানবন্দি দেন মঈনুল হক। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৭ আগস্ট তারিখ ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

আবু সাঈদকে গুলি করার যে ভিডিও, তার ‘র’ ফুটেজ (মূল ভিডিও) নিয়ে আসেন মঈনুল হক। লাইভ সম্প্রচারের ভিডিওটি বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তিনি নিয়ে এসেছেন বলে জানান। তারপর ‘র’ ফুটেজ ও লাইভ সম্প্রচারের ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়।

ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দিতে মঈনুল হক বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে আনুমানিক বেলা ২টা ১৩ মিনিটের দিকে তিনি এনটিভির লাইভে যুক্ত হন। তিনি সেখানকার সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরছিলেন। বেলা আনুমানিক ২টা ১৭ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১ নম্বর ফটকের সামনে সড়ক বিভাজকের ছোট কাটা অংশ দিয়ে কালো টি–শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এক যুবক এগিয়ে আসেন। এ সময় সেই যুবক দুই দিকে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ান। সেখান থেকে কয়েক গজের দূরত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে অবস্থান পুলিশ সদস্যদের, যাঁরা আগে থেকে গুলি করছিলেন, তাঁরা দুই হাত প্রসারিত করা যুবককে গুলি করেন। এই দৃশ্য তখন এনটিভিতে লাইভ সম্প্রচার করা হচ্ছিল।

পরে বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারেন গুলিবিদ্ধ সেই যুবকের নাম আবু সাঈদ। তিনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বলে উল্লেখ করেন মঈনুল হক। তিনি বলেন, সে দিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জানতে পারেন রংপুর মেডিকেলে আবু সাঈদ মারা গেছেন।

এই মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি। সাবেক এই আইজিপি এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য বিবরণ প্রকাশ করেন যে আসামি; সাধারণত তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন। আজ তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল।

এর আগে এ মামলায় মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ, দিনমজুর পারভীন, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান ও শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু সাক্ষ্য দেন।