রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসিন্দা কর্মজীবী নারী শামীমা নাসরিনের সন্তানের বয়স এখন চার বছর। এ বছর ইংরেজি মাধ্যমের একটি স্কুলে মেয়েকে ভর্তি করিয়েছেন। শামীমা জানান, মেয়ের জন্মনিবন্ধন করেছিলেন দুই বছর আগে পাসপোর্ট করার সময়। ১১ বছর বয়সী ছেলের জন্মনিবন্ধন করেছিলেন তাকে স্কুলে ভর্তির সময়।
কুড়িল এলাকার প্রাইভেট কারের চালক আবু বকর সিদ্দিকের সন্তানের বয়স পাঁচ বছর হয়ে গেলেও এখনো তাঁর জন্মনিবন্ধন হয়নি। নতুন বছরে স্কুলে ভর্তির আগে তা করবেন, জানালেন আবু বকর।
মিরপুরের বাসিন্দা জয়তুন আক্তারের সন্তানের বয়স পাঁচ মাস। তার জন্মনিবন্ধনের উদ্যোগ আগেই নেওয়া হয়েছিল। কারণ, পাসপোর্ট করাতে হতো। জয়তুন জানান, তা করতে গিয়ে দেখেন, তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর জন্মনিবন্ধন অনলাইনে দেখা যাচ্ছে না। ফলে নতুন করে তাঁদের জন্মনিবন্ধন করতে হয়েছে। এই মাসে সন্তানের জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন।
রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের তথ্য দেখাচ্ছে, গত বছর মোট জন্মনিবন্ধন হয় ৮৩ লাখ ৬০ হাজার ৩৩৩ জনের। এর মধ্যে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন হয় ৯ শতাংশ শিশুর। এই হার ৯ মাসে (জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর) ছিল ৭ শতাংশ। জন্মের এক বছরের মধ্যে গত বছরও জন্মনিবন্ধন হয় ২০ শতাংশের কিছু বেশি শিশুর।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা প্রণব রায়ের সন্তানের বয়স এক বছর। ‘করছি, করব’ করতে করতে তাঁর ছেলের জন্মনিবন্ধন এখনো করা হয়ে ওঠেনি।
সরকারি নিয়মে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নবজাতকের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হয়। অথচ এই চারটি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, কোনো শিশুর জন্মনিবন্ধনই ৪৫ দিনের মধ্যে হয়নি। সামগ্রিক চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। দেখা যাচ্ছে, প্রয়োজন ছাড়া অভিভাবকেরা সন্তানের জন্মনিবন্ধন করছেন না।
‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন’–এর তথ্য অনুসারে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে মোট জন্মনিবন্ধন হয়েছে ৭৭ লাখ ৮১ হাজার ৩৯০ জনের। এর মধ্যে ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮৪৮ শিশুর নিবন্ধন হয়েছে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে, যা মোট সংখ্যার ৮ শতাংশের কিছু বেশি। জন্মের এক বছরের মধ্যে নিবন্ধন হয়েছে ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ শিশুর—এ ক্ষেত্রে হার ২০ শতাংশের কিছু বেশি।
রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের তথ্য দেখাচ্ছে, গত বছর মোট জন্মনিবন্ধন হয় ৮৩ লাখ ৬০ হাজার ৩৩৩ জনের। এর মধ্যে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন হয় ৯ শতাংশ শিশুর। এই হার ৯ মাসে (জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর) ছিল ৭ শতাংশ। জন্মের এক বছরের মধ্যে গত বছরও জন্মনিবন্ধন হয় ২০ শতাংশের কিছু বেশি শিশুর।
সরকারি নিয়মে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নবজাতকের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হয়। অথচ এই চারটি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, কোনো শিশুর জন্মনিবন্ধনই ৪৫ দিনের মধ্যে হয়নি। সামগ্রিক চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। দেখা যাচ্ছে, প্রয়োজন ছাড়া অভিভাবকেরা সন্তানের জন্মনিবন্ধন করছেন না।
গত ১৫ অক্টোবর খিলগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল-২–এর আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে অনেক অভিভাবককে পাওয়া যায়, যাঁরা সন্তানের জন্মনিবন্ধন করতে এসেছিলেন। এর মধ্যে অনেকে নিবন্ধন করতে এসেছিলেন টাইফয়েডের টিকা দিতে। কেউ এসেছিলেন স্কুলে ভর্তি ও পাসপোর্ট করার প্রয়োজনে।
খিলগাঁও আঞ্চলিক কার্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন সহকারী (জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন) মো. সাজহার উদ্দিন ১৫ অক্টোবর তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলে ভর্তির সময়টায় শিশুদের জন্মনিবন্ধনের আবেদন বেশি জমা হয়। আর পাসপোর্ট করার জন্য সন্তানের জন্মনিবন্ধন করেন অনেকে। তবে এবার সরকার টাইফয়েডের টিকার জন্য নিবন্ধন করার আহ্বান জানানোর পর আগস্ট মাস থেকে তাঁদের কার্যালয়ে জন্মনিবন্ধনের আবেদন এসেছে অনেক।
বিনা মূল্য টাইফয়েডের টিকার জন্য ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিবন্ধন শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাসে। টিকার জন্য অনলাইনে শিশুর ১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়েছে। যদিও জন্মসনদ নেই, এমন শিশুরাও এই টিকার আওতায় ছিল।
রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের তথ্য দেখাচ্ছে, গত বছর মোট জন্মনিবন্ধন হয় ৮৩ লাখ ৬০ হাজার ৩৩৩ জনের। এর মধ্যে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন হয় ৯ শতাংশ শিশুর। এই হার ৯ মাসে (জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর) ছিল ৭ শতাংশ। জন্মের এক বছরের মধ্যে গত বছরও জন্মনিবন্ধন হয় ২০ শতাংশের কিছু বেশি শিশুর।
গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘প্রজ্ঞা’ জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন নিয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, আইন বাস্তবায়নে ত্রুটির কারণে অনিয়ম, অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় এবং আইনে দুর্বলতা থাকার কারণে জন্মের ৪৫ দিন ও এক বছরের মধ্যে জন্মনিবন্ধন কম হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, যেহেতু দেশের প্রায় ৬৭ শতাংশ শিশু স্বাস্থ্যসেবার আওতায় জন্ম নেয়, তাই জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন, ২০০৪ সংশোধন করে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে আইনগতভাবে নিবন্ধনের দায়িত্ব দিলে ৬৭ শতাংশ শিশুর জন্মনিবন্ধন জন্মের পরপরই করা সম্ভব হবে।
এ বি এম জুবায়ের বলেন, জন্মের পরপরই নিবন্ধন করার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে অভিভাবকদের। অনেক মা–বাবা স্কুলে ভর্তির সময় সুবিধামতো বয়স দিয়ে নিবন্ধন করতে চান। সে কারণে দেরিতে নিবন্ধন করেন। তাঁদের বোঝাতে হবে, সামগ্রিকভাবে শিশুসহ জনসংখ্যার জন্য কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ ও অর্থ বরাদ্দের জন্য সঠিক বয়সভিত্তিক জনগোষ্ঠীর পরিসংখ্যান থাকা প্রয়োজন।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক জাতিসংঘের আঞ্চলিক সংস্থা ইউএনএসক্যাপের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে জন্মনিবন্ধনের হার এখন ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যুনিবন্ধনের হার ৪৭ শতাংশ। এ দুটি ক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড় যথাক্রমে ৭৭ ও ৭৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকলেও আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
মৃত্যুনিবন্ধনের ক্ষেত্রেএ জন্মনিবন্ধনের মতোই দেরি হতে দেখা যায়। রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, এ বছর ৯ মাসে মৃত্যুনিবন্ধন হয়েছে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ১৫ জনের। এর মধ্যে মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ১২৪ জনের। এক বছরের মধ্যে নিবন্ধন হয়েছে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩ জনের।
নবজাতকদের জন্মনিবন্ধন নিয়ে গত মাসে তৎকালীন রেজিস্ট্রার জেনারেল (২৪ ডিসেম্বর বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়েছেন) মো. যাহিদ হোসেন তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ছয় বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্মনিবন্ধন করার প্রবণতা বেশি। এক বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্মনিবন্ধনের হার কম। তবে এ হার বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া হয়েছে, আগের তুলনায় বাড়ছেও।
তিনি জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে শিশুর জন্মনিবন্ধনের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানোর বিষয়টি মেনে নিয়ে বলেন, সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীরা তথ্যদাতার ভূমিকা পালন করবেন। নিবন্ধনের বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় থেকে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে।