
কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক দখল করে দুপাশে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক ঝুপড়ি দোকান। এ কাজে গাড়ি চলাচলের পথ সরু হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকেরা।
১৭ অক্টোবর সকাল ১০টায় দেখা যায়, প্রধান সড়কের লালদীঘির পাড়ে বিশাল যানজট। এর মূল কারণ দীঘির পূর্ব পাড়ে জেলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদ কার্যালয়ের সামনে গড়ে ওঠা ২০টির বেশি ঝুপড়ি দোকান। দোকানের কারণে পথচারীরা হাঁটতেও পারছেন না। বিকেল চারটার দিকে এই যানজট আরও তীব্র হয়।
যানজটে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকা রিকশাচালক করিম উল্লাহ (৪৪) বলেন, ১২ ফুটের রাস্তায় ১৩ হাজার গাড়ি। তার ওপর ফুটপাতে বসে দোকান। মানুষও হাঁটে রাস্তার ওপর দিয়ে। এ কারণে গাড়ির আর এগোয় না।
একটু দূরে পাবলিক হলের দেয়ালের (প্রধান সড়কের পাশে) পাশ ঘেঁেষ আরও ৩০টির বেশি ঝুপড়ি দোকান খুলে চলছে পুরোনো কাপড়ের ব্যবসা। তার পাশে রয়েছে চটপটি বিক্রির একাধিক দোকান ও অটোরিকশার স্ট্যান্ড।
কাপড় কিনতে লোকজন দোকানের সামনে দাঁড়ালে পেছন থেকে রিকশা কিংবা ইজিবাইকের (ব্যাটারিচালিত টমটম) ধাক্কা লাগে।
এ নিয়ে বচসা লেগেই থাকে। তা ছাড়া পৌরসভা ভবন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে, বাজারঘাটা, আইবিপি সড়কসহ প্রধান সড়কের বিভিন্ন এলাকায় আরও দেড় শতাধিক ঝুপড়ি দোকান রয়েছে।
লালদীঘির পাড়ের ঝুপড়ি দোকানের বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, ‘গরির মানুষের কাছে কম দামে পুরোনো কাপড় বিক্রির জন্য ফুটপাতে দোকান খুলেছি। সারা দিনে যা আয় হয়, তার সবটা হাতিয়ে নিচ্ছে রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা, পৌরসভা ও পুলিশের কিছু কর্মচারী।’
কক্সবাজারে বেড়াতে আসা কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ী সিরাজুল মাওলা (৪৮) বলেন, পর্যটন শহরের প্রধান সড়কের এই দুরবস্থা দেখে যে–কেউ হতাশ না হয়ে পারবেন না। এখানকার জেলা প্রশাসন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ আর রাজনৈতিক দলের নেতাদের রুচিবোধ নিয়ে নাগরিকেরা প্রশ্ন তুলতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তারেক বলেন, ‘ঝুপড়ি দোকান থেকে আমরা কোনো সুবিধা নিই না। সন্ধ্যার পর অফিস ত্যাগ করলে দোকানপাট বসে। এতে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।’
জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী বলেন, প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতা সড়কের ফুটপাতে ঝুপড়ি দোকান বসিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এসব দোকান উচ্ছেদ করা দরকার।
শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, একসময় ভাসমান এই লোকজন শহরের ভেতরে পুরোনো কাপড়ের ব্যবসা করতেন। সেখান থেকে উচ্ছেদ করলে তাঁরা প্রধান সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেন। তাঁদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দলের কেউ জড়িত নন। বিকল্প ব্যবস্থা করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারে।
জানতে চাইলে পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল বলেন, পর্যটন শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও প্রধান সড়কের যানজট কমিয়ে আনতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।