
রাজধানীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ও শয্যাসংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি অংশকে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী রোববার থেকে ঢাকা মেডিকেলে ৩০০ শয্যার এই করোনা ইউনিট চালু হবে। পাশাপাশি ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মুগদা জেনারেল হাসপাতালে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
এর আগে রাজধানীতে ছয়টি সরকারি ও তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল নির্ধারণ করেছিল সরকার। তবে আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকায় শুরুতে শুধু কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা চলছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার নয়টি হাসপাতালের ছয়টিতেই করোনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিলেন।
নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হাসপাতাল, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল এবং বেসরকারি তিন হাসপাতাল রিজেন্ট হাসপাতাল, উত্তরা ও মিরপুর এবং নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে অবস্থিত সাজিদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে গতকাল রোগী ভর্তি ছিলেন।
বহির্বিভাগ চালু থাকলেও মিরপুরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতাল এবং মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছিলেন না। আর রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালটি এখনো রোগী ভর্তির উপযোগী হয়নি। আরও দু–তিন দিন সময় লাগবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
নির্ধারিত নয়টি হাসপাতালে শয্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ৩৩০টি। মুগদা হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেলের ৮০০ শয্যা যুক্ত হওয়ায় করোনা চিকিৎসার শয্যাসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২ হাজার ১৩০।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার সুবিধা বা ভেন্টিলেশন জরুরি। কিন্তু নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে রেলওয়ে, মহানগর এবং মিরপুরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতালে আইসিইউ–সুবিধা নেই।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল শাখা) আমিনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত অধিকাংশ হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন। যেসব হাসপাতালে আইসিইউর সুবিধা নেই, সেখানে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মুগদা হাসপাতালকে করোনার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলেও রোববার থেকে করোনার চিকিৎসা শুরু হবে।
ঢাকা মেডিকেলে করোনা ইউনিট
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটকে করোনা ইউনিট করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ কারণে বার্ন ইউনিটে থাকা সব রোগীকে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বার্ন ইউনিটে থাকা প্রায় ৩০০ রোগীকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে হস্তান্তর করা হচ্ছে। রোববার করোনা ইউনিট চালু করা হবে। এখানে ৩০০ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।
ছয় হাসপাতালে করোনা রোগী
কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম থাকায় বেশ কিছুদিন শুধু কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় কুর্মিটোলা হাসপাতালেও রোগী ভর্তি করা হয়। বাবুবাজার সেতুর পাশেই অবস্থিত মহানগর জেনারেল হাসপাতালেও করোনা রোগী ভর্তি আছেন।
সাজিদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে গতকাল ৩৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ৩ জনকে আইসিইউতে ভর্তি রাখা হয়েছে। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক ওবায়দুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে ১২ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। পর্যাপ্ত পিপিই রয়েছে। চারটি আইসিইউ শয্যা রয়েছে, এর মধ্যে তিনটিতেই রোগী আছেন।
রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখায় গতকাল ২৪ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে উত্তরা শাখায় ১৩ এবং মিরপুর শাখায় ১১ জন রোগী ভর্তি আছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন আছেন আইসিইউতে। রিজেন্ট গ্রুপের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিক শিবলী বলেন, দুই শাখায় ৬ জন চিকিৎসক এবং ১৮ জন নার্স পালা করে কাজ করছেন। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পিপিই রয়েছে।
রোগী নেই তিন হাসপাতালে
মহাখালীতে অবস্থিত শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত এই হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি করা হয়নি। হাসপাতালের পরিচালক ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতাল প্রস্তুত থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এখনো করোনা রোগী পাঠানো হয়নি।
রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালটি বেশ কয়েক বছর অবহেলায় পড়ে ছিল। এটিকে করোনায় আক্রান্তদের জন্য নির্ধারণ করার পর হাসপাতাল ভবন, ড্রেনেজ লাইন সংস্কার ও রং করার কাজ করা হয়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সৈয়দ ফিরোজ আলমগীর বলেন, দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা যাবে। শুরুতে ৫০ শয্যা, পরে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হবে।
মিরপুরের ২০০ শয্যার মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতালে বহির্বিভাগ চালু থাকলেও গতকাল পর্যন্ত করোনা রোগী ভর্তি হননি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।