
সারা দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন চলছে। এ অবস্থায় দিন এনে দিন খেয়ে যাঁদের সংসার চলে, তাঁরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকের ঘরে খাবার নেই। অনেকে ধারদেনা করে চলছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে অনলাইনভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আর্ত সারথি’। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা পরিষদের পেছনে সংগঠনটি একটি দোকানঘর ভাড়া নিয়েছে। ওই ঘরে সহায়তার খাদ্যসামগ্রী রাখা হয়েছে। দোকানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মানবিক দোকান’। ওই দোকান থেকে তালিকা অনুযায়ী কর্মহীনদের দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে খাদ্যসহায়তা।
আর্ত সারথির কর্মীরা পাড়া-মহল্লায় ঘুরে প্রকৃত কর্মহীন ও দরিদ্রদের খুঁজে বের করে তাঁদের তালিকা তৈরি করছেন। সেই তালিকা ধরে ‘মানবিক দোকান’ থেকে তাঁদের বিনা মূল্যে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আলু, লবণের প্যাকেট তুলে দিচ্ছেন। গত এক সপ্তাহে সংগঠনটি ২৫০টি পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে।
সংগঠনের কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিকভাবে সহযোগিতার ইচ্ছা থেকেই চার বছর আগে সংগঠনটির জন্ম হয়। দেশব্যাপী বই পড়া আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মানবিক প্রজন্ম সৃষ্টি করা এবং পাঠাগার গড়ে তোলা আর্ত সারথির অন্যতম লক্ষ্য। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসাসেবাও দিয়ে আসছে আর্ত সারথি। তবে করোনাকাল আসার পর তাঁদের সংগঠনটি অসহায় দরিদ্র ও কর্মহীনদের পাশে দাঁড়িয়েছে। গত এক বছরের বেশি সময়ে তারা কমপক্ষে দুই হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ এবং নিজেদের উদ্যোগে তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণ করেছে। পাশাপাশি কাজ করছে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে।
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা পরিষদের পেছনে সংগঠনটি একটি দোকানঘর ভাড়া নিয়েছে। দোকানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মানবিক দোকান’। ওই দোকান থেকে তালিকা অনুযায়ী কর্মহীনদের দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে খাদ্যসামগ্রী।
আর্ত সারথির সভাপতি রেজা করিম বলেন, সংগঠনটির নির্ধারিত কোনো সদস্যসংখ্যা নেই। সারা দেশের ফেসবুকের বন্ধুরা ও স্থানীয় বইপড়ুয়া ছেলেমেয়েরাই এর প্রাণ। ওই সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন কৃষ্ণ কুমার কর্মকার নামের একজন ক্ষুদ্র জুয়েলারি ব্যবসায়ী। মানবিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে একটি মানবিক সমাজ গড়ে তোলাই আর্ত সারথির মূল লক্ষ্য।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক কৃষ্ণ কুমার কর্মকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক মানুষ আছেন, অভাব না থাকলেও ত্রাণ নিতে আসেন। আবার অনেকে আছেন, যাঁরা সমাজে নিজেদের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানেও ত্রাণ নিয়ে যান। যার ফলে যাঁরা প্রকৃতপক্ষে অভাবে বা ভাতের কষ্টে আছেন, তাঁরা বঞ্চিত থেকে যান। এ বিষয় মাথায় রেখে আমরা পাড়া-মহল্লায় ও প্রতিবেশীদের মধ্যে খোঁজ নিয়ে প্রকৃত দুস্থ মানুষদের খুঁজে বের করে তাঁদের ত্রাণ দেওয়ার চেষ্টা করি।’
আর্ত সারথির তহবিল বিষয়ে কৃষ্ণ কুমার কর্মকার বলেন, সারা দেশে ও বিদেশে কয়েক শ বন্ধু রয়েছেন, যাঁরা নিয়মিতভাবে এ সংগঠনের তহবিলে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। টাকা পাওয়ার পর ফেসবুকে টাকার পরিমাণসহ প্রাপ্তি স্বীকার শিরোনামে তথ্য প্রচার করেন তাঁরা। এ ছাড়া যাঁদের সহায়তা দেওয়া হয়, তাঁদের ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে প্রচার হয়।
সখীপুর প্রেসক্লাবের সামনে চা বিক্রি করেন ছাহেরা খাতুন। স্বামী আরেকটি বিয়ে করে পঞ্চগড় চলে গেছেন। এখন চা বিক্রি করে ছাহেরাই ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছেন। বৃদ্ধ মা–বাবাসহ পাঁচজনের সংসার তাঁর। ১২ দিন ধরে কঠোর লকডাউনে চায়ের দোকান বন্ধ। টাকা ধার করে সংসার চালাচ্ছেন। ছাহেরা বলেন, ‘মানবিক দোকান থেকে আমি চাল, ডাল ও আলু নিয়েছি। এ অভাবের মধ্যে আমার একটু হলেও উপকার হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চিত্রা শিকারী বলেন, আর্ত সারথি নামের সংগঠনটি ‘মানবিক দোকান’ খুলে কর্মহীনদের মধ্যে খাদ্যসহায়তা বিতরণ করছেন, এটা নিঃসন্দেহে ভালো খবর। এ সময়ে সহায়হীনদের পাশে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।