
ছিনতাই করা সোনার বারের ভাগ নিয়ে দ্বন্দ্বে যশোর সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গায় লাভলু হোসেন (৪০) খুন হন বলে দাবি করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় লাভলুর ছেলে সাকিল হোসেন (১৬) ও ইসরাইল (৩৮) নামের ছিনতাইকারী চক্রের একজনকে গ্রেপ্তার এবং দুটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার দুপুরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পাঠানো একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, লাভলু হোসেনের ছেলে সাকিল হোসেন ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। চক্রটি সোনার বারের একটি বড় চালান ছিনতাই করে। এরপর তা বিক্রি ও টাকা ভাগ–বাঁটোয়ারায় জড়িয়ে যান লাভলু। এটা নিয়ে দ্বন্দ্বে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় লাভলুর ছেলে সাকিল ঘরের বাইরে মুঠোফোনে গেম খেলছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর তাঁকে অর্থের লোভ দেখিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে বলা হয়।
গত শুক্রবার সকালে পুলিশ যশোর সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা রেললাইনের পাশ থেকে লাভলু হোসেনের লাশ উদ্ধার করে।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রূপন কুমার সরকার প্রথম আলোকে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, এ ঘটনায় ডিবি পুলিশের একটি দল অনুসন্ধানে নামে। এরপর গতকাল শনিবার লাভলুর ছেলে সাকিল ও তাঁর স্ত্রী সালমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সাকিল ঘটনা আড়াল করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিল। একপর্যায়ে সে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে। একই সঙ্গে হত্যা ও লাশ গুম করার সময় ঘটনাস্থলে থাকার কথা স্বীকার করে সাকিল। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ তাদের বাড়ির পাশের একটি পুকুর থেকে দুটি গুলিভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করে।
সাকিল পুলিশকে জানায়, ছিনতাকারী চক্রের প্রধান খোঁড়া কামরুল ও তাঁর সহযোগীরা মাস দেড়েক আগে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে প্রায় ছয় কেজি ওজনের সোনার বারের চালান ছিনতাই করেন। খোঁড়া কামরুলের সহযোগী সাকিল ও স্বর্ণকার কবীর হাওলাদারের মাধ্যমে সোনার বারগুলো বিক্রি করা হচ্ছিল। এর একপর্যায়ে সাকিলের বাবা লাভলু এ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যান। তাঁরা একত্র হয়ে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে সোনার বার বিক্রির টাকা ভাগ–বাঁটোয়ারা করতেন। এটা নিয়ে লাভলুর সঙ্গে খোঁড়া কামরুলের বিরোধ হয়।
গত বৃহস্পতিবার রাতে খোঁড়া কামরুল তাঁর বাড়িতে লাভলু ও তাঁর ছেলে সাকিল ডেকে আনান। একপর্যায়ে সাকিল ঘরের বাইরে মুঠোফোনে গেমস খেলতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাত ১২টার দিকে খোঁড়া কামরুল, কবীর ও রফিকুল মিলে লাভলুকে গুলি করে। সাকিল ঘরে গিয়ে ঢুকে দেখে তার বাবা মেঝেতে পড়ে আছেন। তাঁর বুক ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। পরে কামরুল, তাঁর স্ত্রী, বোনসহ উপস্থিত অন্যরা সাকিলকে অর্থের লোভ দেখিয়ে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে বলেন।
এরপর কামরুজ্জামান ওরফে খোঁড়া কামরুলকে গ্রেপ্তার করতে অভিযানে নামেন জানিয়ে ওসি রূপন কুমার সরকার বলেন, অভিযানে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খোঁড়া কামরুলের সহযোগী ইসরাইলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।
রূপন কুমার সরকার আরও বলেন, এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।