
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাখোলা গ্রামের ধানখেতের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি প্যান্ডেল। লম্বাখোলাসহ পাশের হরিখোলা, তেলখোলা গ্রামের চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের মানুষ একত্র হয়ে সেখানে মেতে উঠেছে বিহু ও সাংগ্রেং উৎসবে।
গতকাল শুক্রবার শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এ উৎসব আয়োজন করেছে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। শনিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, একটি প্যান্ডেলের নিচে রাখা হয়েছে জলভর্তি একটি নৌকা। নৌকার এক পাশে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে বসে আছেন চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা তরুণীরা। প্যান্ডেলের বাইরে অপেক্ষায় তরুণেরা। কিছুক্ষণ পর তরুণেরা প্যান্ডেলের সামনে এসে দাঁড়ান এবং পছন্দের তরুণীর উদ্দেশ্যে জল ছুড়ে মারেন। জবাবে তরুণীও তরুণকে পাল্টা জল ছুড়ে মেরে সাংগ্রেং ও বিহু উৎসবে আমন্ত্রণ জানান। এরপর তাঁদের মধ্যে চলে জলকেলি। একটি প্যান্ডেলে বসে গ্রামের নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোরেরা এ উৎসব উপভোগ করছেন।
উৎসবে দুই সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী আলোক নৃত্য, বাঁশখেলা, বাঁশি বাজানো, খিংখং বাজনা ও খিংখিলি গানও পরিবেশিত হচ্ছে প্রতিদিন। কক্সবাজার জেলা আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মং থে হ্লা প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়ি এলাকা লম্বাখোলা, হরিখোলা, তেলখোলা গ্রামে অন্তত ২৫ হাজার চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের বসবাস। পাহাড়ে জুমচাষ করে চলে তাঁদের সংসার। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বর্ষবরণের উৎসব হয়নি। এর আগে মাত্র তিনবার এই পল্লিতে সীমিত আকারে বর্ষবরণের উৎসব হয়েছিল। এবার কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র দুই সম্প্রদায়ের লোকজনকে বর্ষবরণ উৎসব উদ্যাপনের সুযোগ করে দিয়েছে। আগামীকাল রোববার সন্ধ্যায় শেষ হবে উৎসব।
এই উৎসবে অংশ নেওয়া তরুণী লাকি মে চাকমার (২২) সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রচণ্ড গরম উৎসবের আমেজ বাড়িয়ে দিয়েছে। তা ছাড়া আগে পৃথকভাবে হলেও এবার চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যারা একসঙ্গে উৎসব উদ্যাপন করছি। বিদায়ী বছরের সব দুঃখ-গ্লানি পানিতে ভাসিয়ে দিয়ে নেচে-গেয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি।’
উৎসবে অংশ নেওয়া তরুণ অং তঞ্চঙ্গ্যা (২৩) পড়ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। তিনি বলেন, ‘শৈশবে এলাকায় এমন জমকালো উৎসব দেখেছি। আগামী দিনেও এ রকম উৎসবের মাধ্যমে নিজেদের ঐতিহ্য তুলে ধরতে চাই।’
এর আগে গতকাল দুপুরে উৎসবের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল।