তিন কিলোমিটারের পথচিত্রে বাংলাদেশের ইতিহাস–ঐতিহ্য

নড়াইল শহরের তিন কিলোমিটার সড়কে ১২ ফুট চওড়া করে এ পথচিত্র আঁকা হয়েছে।
ছবি: প্রথম আলো

নড়াইলে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নান্দনিক পথচিত্র এঁকেছেন এলাকাবাসী। জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বর থেকে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ মাঠ (কুড়িরডোব মাঠ) পর্যন্ত শহরের প্রধান সড়কে এ পথচিত্র আঁকা হয়েছে। এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও উন্নয়নের চিত্র।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শুরু হয়ে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত চলে এ কার্যক্রম। চিত্রশিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী, রংমিস্ত্রি ও নড়াইলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় বিশাল এই কর্মযজ্ঞ সফল হয়।

গতকাল সন্ধ্যায় শহরের চৌরাস্তায় এর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। এ সময় পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা, পথচিত্র বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মো. রবিউল ইসলাম, সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজার বাবা গোলাম মুর্তজা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মলয় কুমার কুণ্ডু ও সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

নড়াইলের এস এম সুলতান বেঙ্গল আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ অনাদী বৈরাগী বলেন, ৩ কিলোমিটার সড়কে ১২ ফুট চওড়া করে এই পথচিত্র আঁকা হয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন বর্ণমালা, স্বাধীনতার বিভিন্ন স্লোগান, গ্রামবাংলার চিত্র, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্ত ঘটনা ও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পথচিত্রে স্থান পেয়েছে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শুরু হয়ে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত চলে এ কাজ।

আয়োজকেরা জানিয়েছেন, আল্পনার কাজ সফল করতে গতকাল বিকেল থেকে ওই সড়কের ধুলাবালু পরিষ্কার করা হয়। সন্ধ্যা থেকে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুরো এলাকাকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে ৩ শতাধিক মানুষ এই কাজ সফল করে তোলেন।

নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, এই মহতী উদ্যোগ সফল করতে পুলিশ প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। আল্পনা আঁকার কাজ চলাকালে যানবাহন ও পথচারীদের বিকল্প সড়কে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়।

পথচিত্র বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মো. রবিউল ইসলাম দাবি করেন, বাংলাদেশে এত বড় পথচিত্র এই প্রথম। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রায় ৪ হাজার লিটার রঙের প্রয়োজন ছিল, যার মূল্য প্রায় ১৬ লাখ টাকা। এর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, নড়াইল ক্রীড়া, শিল্প, সংস্কৃতির উর্বর ভূমি। এখানে খ্যাতিমান অনেক ব্যক্তিত্বের জন্ম। লাখো প্রদীপ জ্বেলে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্মরণ করে নড়াইলবাসী। এসব কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে।