Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, লঞ্চটির ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল, চলছিল বেপরোয়া গতিতে

এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরগুনা যাচ্ছিল। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে এটিতে আগুন ধরে যায়

ঢাকার সদরঘাট থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় এমভি অভিযান-১০ নামে লঞ্চটি যখন বরগুনার উদ্দেশে যাত্রা করে, তখন থেকেই এর গতি ছিল বেপরোয়া। ইঞ্জিনে ত্রুটি থাকায় চারজন টেকনিশিয়ান ত্রুটি মেরামতে কাজ করছিলেন। এ জন্য পুরো গতিতে দুটি ইঞ্জিন চালিয়ে ট্রায়াল দেওয়া হচ্ছিল। আর এতেই মূলত ইঞ্জিনের অতিরিক্ত তাপে আগুন ধরে যায়। আগুন লেগে যাওয়ার পর নেভানোর কোনো চেষ্টা না করে লঞ্চটির শ্রমিক-কর্মচারী ও মালিক লঞ্চ থেকে সটকে পড়েন। লঞ্চের বেঁচে ফেরা কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য মিলেছে।

Also Read: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর পাড়ে মৃতদের স্বজনদের ভিড়

বরগুনার ব্যবসায়ী মো. সগির হোসেন হাওলাদার অভিযান-১০ নামে ওই লঞ্চের তিনতলার কেবিনের যাত্রী ছিলেন। তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। লঞ্চটি অর্ধেকের বেশি পুড়ে যাওয়ার পর প্রচণ্ড উত্তাপ আর ধোঁয়ায় দম আটকে যাওয়ায় ঘুম ভেঙে যায় তাঁর। এরপর বাইরে নেমে দেখেন, চারদিকে আগুন। তিনি লঞ্চের পাশের ত্রিপলের রশি বেয়ে দ্রুত দোতলায় নামেন। সেখানে অনেক নারী, শিশুকে অজ্ঞান ও দগ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। একটি ফ্যামিলি কেবিনে দুই শিশু ও এক নারীর দগ্ধ নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। সগির হোসেন কী করবেন, ভেবে দিশেহারা। তিনি নদীতে ঝাঁপ দেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করেন।

Also Read: ভয়ংকর পরিস্থিতির কথা জানালেন প্রাণে বেঁচে যাওয়া ইউএনও

সগির হোসেন বলেন, লঞ্চটির ঢাকার ঘাট ছাড়ার পর তিনি ইঞ্জিনকক্ষের কাছে গিয়েছিলেন। তখন ইঞ্জিনের বেপরোয়া গতি তুলতে চারজন টেকনিশিয়ানকে দেখতে পান। এ সময় তিনি তাঁর মুঠোফোনে ইঞ্জিনের ছবিও তোলেন।

কয়েকজন যাত্রী বলেন, লঞ্চটির ইঞ্জিনের ত্রুটি থাকায় চারজন ইঞ্জিন মেরামতকারী টেকনিশিয়ান লঞ্চটির ইঞ্জিনকক্ষে ছিলেন। তাঁরাই মূলত পুরো গতিতে লঞ্চটি চালাচ্ছিলেন। ইঞ্জিনে গ্যাস হওয়ায় বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই ইঞ্জিন প্রচণ্ড গরম হচ্ছিল। ইঞ্জিনের ত্রুটি খুঁজে পেতে পুরো গতিতে দুটি ইঞ্জিনই চালাচ্ছিলেন তাঁরা। বেপরোয়া গতির কারণে লঞ্চটি কাঁপছিল।

সগির হোসেন বলেন, লঞ্চটিতে অগ্নিনির্বাপকের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আর আগুন লাগার পরপরই মালিক ও স্টাফরা যাত্রীদের রেখে লঞ্চ থেকে সটকে পড়েন।

Also Read: ‘দুই ঘণ্টা সুগন্ধায় ভাইস্যা আছিলাম’

প্রত্যক্ষদর্শী বরগুনার আরেক যাত্রী জাহিদুল ইসলাম বলেন, রাত পৌনে একটায় বরিশাল নৌবন্দর ত্যাগ করার পর লঞ্চটির পুরো ডেক উত্তপ্ত হয়ে যায়। শীত থাকায় চারপাশ ত্রিপল দিয়ে আটকানো ছিল। রাত আড়াইটার দিকে লঞ্চটি ঝালকাঠি স্টেশন থেকে দেউরী এলাকায় আসতেই আগুন লাগে। কিছু দূরে এলে ইঞ্জিনকক্ষে আগুন ধরে যায়। এরপর আগুন পুরো লঞ্চের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। লঞ্চের ২০ ব্যারেল ডিজেল, নিচতলায় দুটি মোটরসাইকেল এবং রান্নার জন্য রাখা কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। একই সঙ্গে ভিআইপি কেবিনের এসির কম্প্রেসারগুলোও একে একে বিস্ফোরিত হয়।

নদীর পাড়ে স্বজনদের ভিড়। দিয়াকুল এলাকা, পোনাবালিয়া ইউনিয়ন, ঝালকাঠি, ২৪ ডিসেম্বর

যাত্রীদের অভিযোগ, লঞ্চটির ইঞ্জিনে ত্রুটি মেরামত করতে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের ছাড়া ইঞ্জিনের ট্রায়াল দিতে পারত। কিন্তু প্রায় ৭০০ যাত্রী নিয়ে এই ট্রায়াল দেওয়ার কারণেই এতগুলো মানুষের প্রাণহানি ও দগ্ধ হলো। এর দায় কে নেবে, প্রশ্ন করেন তাঁরা।

Also Read: ঝালকাঠিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৬

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সরে বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক মো. কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা রাত সাড়ে তিনটার দিকে লঞ্চে গিয়ে আগুন নেভাই। এ সময় কর্তৃপক্ষের কাউকেই পাইনি। পরে স্পিডবোট দিয়ে খোঁজাখুঁজিও করি। লঞ্চের কেবিনে কেবিনে লাশ পড়ে ছিল। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, ইঞ্জিনরুমে আগুন ধরে গিয়েছিল। লঞ্চে আমরা অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার কিছুই পাইনি।’

Also Read: ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লঞ্চটিতে অগ্নিনির্বাপকের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল কি না এবং এটি ট্রায়াল যাত্রা ছিল কি না, সেসব বিষয় তদন্ত করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি করেছে। এই কমিটির প্রতিবেদন দিলে বোঝা যাবে কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর আগে আগাম কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।

Also Read: বরিশাল মেডিকেলে দগ্ধ ৭০ জন ভর্তি, পরে ১০ জনকে ঢাকায় স্থানান্তর