ময়মনসিংহে মেলায় নজর কেড়েছে ‘রাজার চায়ের দোকান’

রাজা মামার চা ময়মনসিংহের মেলায় বেশ সাড়া ফেলেছে
ছবি: প্রথম আলো

সামনে পিতলের নানা আকৃতির কেটলি সাজানো। সেগুলো দেখতে রাজা-বাদশাহদের যুগে ব্যবহৃত কেটলির মতো। দোকানের ভেতর যাঁরা বেচাবিক্রির সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের পোশাকও সেই আমলের মতো চাকচিক্যময়। কিসের দোকান প্রথমে বোঝা না গেলেও ক্রমে স্পষ্ট হয়, এটি একটি চায়ের দোকান। নানা ধরন আর দামের চা পাওয়া যায় এখানে।

ময়মনসিংহ নগরের টাউন হল চত্বরে চলমান কুটিরশিল্প মেলায় এমন চায়ের দোকান সাজিয়ে বসেছেন ‘রাজা মামা’ নামের এক দোকানি। বুধবার ভরদুপুরে দোকানের সামনে তরুণ-তরুণীদের ভিড় দেখা গেল। ফেসবুকে ইতিমধ্যে ‘রাজার চায়ের দোকানের’ কথা ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে চায়ের মূল্য সর্বনিম্ন ২০ টাকা আর সর্বোচ্চ ৫০ টাকা।

চা পানের পর আনোয়ার হোসেন নামের একজন গ্রাহক বলেন, মূলত এটি বাদামের স্বাদ। তাঁর এমন কথার বিরোধিতা করেননি বিশেষ এই চা–দোকানের মালিক রাজা মামাও। তিনি বলেন, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, জাফরান, নানা জাতের মসলা, তাল মিছরিসহ আরও কিছু উপাদান ব্যবহার করেন চায়ে। মেশানো হয় গরুর দুধ ও গুঁড়া দুধ। এই চায়ের আরও একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি বালুর তাপে গরম করা হয়।

বিশেষ এই চা ও চায়ের দোকানের পেছনের গল্প শোনান রাজা মামা। তিনি বলেন, তাঁর আসল নাম আজহার উদ্দিন। বসয় ৪২ বছর। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৯ সাল থেকে তিনি চা বিক্রি করেন। মূলত ঢাকার বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে তাঁর একটি চায়ের দোকান আছে। ওই দোকানে পাঁচ টাকার সাধারণ চা বিক্রির পাশাপাশি নিরীক্ষা হিসেবে ভিন্ন স্বাদের নানা চা বিক্রি শুরু করেন। এগুলো জনপ্রিয় হয়।

আজহার উদ্দিনের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার নওধার গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আলীম উদ্দিন। ছোটবেলা থেকে অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে বড় হয়েছেন। বাসে ফেরি করে পণ্য বিক্রিসহ নানা কাজ করেছেন। এরপর ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে যান সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে। সেখানে গিয়ে বুঝতে পারেন, অবৈধ ভিসায় তিনি সে দেশে এসেছেন। আবুধাবিতে পালিয়ে থাকা জীবনে তিনি হোটেলে কাজ করতেন। সেখানে চা বানানো শেখেন তিনি। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ২০১৯ সালে দেশে ফিরে আসেন। ঢাকায় একটি চায়ের দোকান দেন।

এভাবে সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয় রাজা মামার চা

আজহার উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে হলেও নিজের এলাকার মানুষ আমাকে বেশি চেনে না। এবার প্রথম ত্রিশালের নজরুলজয়ন্তী মেলায় চা বিক্রি করে মানুষের মনে জায়গা পেয়েছি। সে ভালবাসার টানে আমি ময়মনসিংহে নিজের একটি দোকান করতে চাই। ময়মনসিংহের মেলায় এসে দেখছি, মানুষ আগ্রহ নিয়ে আমার চা পান করছে।’ সব মিলিয়ে এখন ভালো আছেন বলে জানালেন তিনি।