
জামালপুরে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে পাঁচটি উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৬৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
নদীতীরবর্তী ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী, সাপধরী, বেলগাছা, পাথর্শী, কুলকান্দি, নোয়ারপাড়া, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিজাকাজানী, চুকাইবাড়ী, বাহাদুরাবাদ ও পৌরসভার আংশিক, মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ, জোড়খালী, বালিজুড়ী ও মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া, ঝাউগড়া, আদ্রা ইউনিয়নসহ ২৮টি ইউনিয়নের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এতে এসব এলাকার ৬৩ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত শনিবার থেকে পানি অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা করছেন এসব অঞ্চলের হাজারো মানুষ। এদিকে নদীর পানি বাড়ায় প্রায় ৭ হাজার ৪১০ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপের নিয়ন্ত্রক আবদুল মান্নান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এখন বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য সময়ের চেয়ে অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়ছে। এতে বিভিন্ন এলাকা বন্যাকবলিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ২৮ ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। এতে আমন ধান, বীজতলাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্তও অনেক গ্রামেই অল্প পানি ছিল। তবে পানি বাড়তে থাকায় নতুন করে আরও অনেক গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের বাসিন্দাদের নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এর মধ্যে অনেকেই রাস্তা, উঁচু জায়গা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিচ্ছে। তবে চার দিন ধরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দী মানুষের জন্য সরকারিভাবে এখনো কোনো সাহায্য পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
চিনাডুলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, পুরো ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রথম দিকে পানি ধীরে ধীরে বাড়ছিল। কিন্তু গত দুই দিন থেকে পানি দ্রুত বাড়ছে। গ্রামের সব রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। চলাচলের জন্য নৌকাও পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারিভাবেও কোনো ধরনের ত্রাণসামগ্রীও বিতরণ করা হয়নি।
জানতে চাইলে জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী প্রথম আলোকে বলেন, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এখনো ভয়াবহ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তারপরও বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। দুর্গত এলাকার জন্য ৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। আজ নতুন করে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে।