লাকসামে জামায়াত নেতাদের প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর

লাকসাম ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের পুড়ে যাওয়া একটি মাইক্রোবাস। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে
ছবি: এম সাদেক

কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া একটি মাইক্রোবাসে আগুন ও দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার লাকসামে জামায়াতের ঝটিকা মিছিলের পর এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ।

ভাঙচুর হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, বেশ কয়েকটি দোকান, একটি বাড়ি ও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দফায় দফায় এই তাণ্ডব চালানো হয়। এ সময় কুমিল্লার বড় ব্যবসাকেন্দ্র লাকসাম বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার লাকসাম ব্যাংক মোড়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে সভা হয়েছে। সভা থেকে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তি ও তাঁর ছবি ভাঙচুর করার অভিযোগ তোলা হয়। এতে বক্তব্য দেন লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত আলী, লাকসাম পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবুল খায়ের, লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

বুধবারের ঘটনা নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লাকসাম বাজারের বাইপাস, উত্তর লাকসাম, চাঁনমিয়া মার্কেট এলাকার অন্তত ১০ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তাঁরা কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয় একজন প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের একটি লাইন উদ্ধৃত করে বলেন, ‘...মনে মনে সকলেই যাহা জানে মুখ ফুটিয়া তাহা বলিবার অধিকার তাহার নাই।’ এই নেতা বলেন, ‘জামায়াত–শিবিরের রাজনীতি ও কার্যক্রম আমার একবারেই অপছন্দ। ব্যবসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে তাণ্ডবলীলা কোনোভাবেই মানতে পারছি না।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ১০ নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে বুধবার ভোরে ঝটিকা মিছিল বের করেন লাকসাম উপজেলা জামায়াতের নেতা–কর্মীরা। মিছিল শেষে তাঁরা লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লাগোয়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির চিকিত্সক আবদুল মবিনের চেম্বারে বসেন। সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা এই খবর জানতে পারেন। এরপর অন্তত ৩০০ লোক জড়ো হয়ে বেলা ১১টায় আবদুল মবিনের ব্যক্তিগত চেম্বারে লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢুকে তাঁর প্রাইভেট কার ভাঙচুর করে। একই সঙ্গে তাঁর লাকসাম কমপ্যাথ হাসপাতালের চেম্বারের কাচ ও আসবাব ভাঙচুর করেন তাঁরা।

এরপর বাইপাস এলাকায় লাকসাম ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের দোতলা এবং তিনতলায় ভাঙচুর করা হয়। লাকসাম পৌর জামায়াতের আমির জয়নাল পাটোয়ারীর পশ্চিমগাঁও এলাকার থাই অ্যালুমিনিয়ামের দোকানেও হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়। লাকসাম বাজারের চান মিয়া মার্কেটের কাপড়ের দোকানে লুটপাট চালানো হয়। জামায়াত নেতা দেওয়ান খোকনের পশ্চিমগাঁও এলাকার বাড়িতে হামলা করা হয়।

এরপর উত্তর লাকসাম গন্ডামারা এলাকায় অবস্থিত লাকসাম ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুটি ক্যাম্পাসের জানালার কাচ, কম্পিউটার, এসি ভাঙচুর করা হয়।

লাকসাম উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা সারওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এবং লাকসাম ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান।

ভাঙচুর হওয়া লাকসাম ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি শ্রেণিকক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লাকসাম ডায়াগনস্টিক হাসপাতালের তিনতলায় কাচ ভাঙা। বেশ কিছু কাচের টুকরো ফেলে রাখা আছে সভাপতির কক্ষে। ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিটি কক্ষের জানালার কাচের টুকরো এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। বইপত্র তছনছ করা। পোড়া মাইক্রোবাস মাঠে পড়ে আছে। ভাঙা মাইক্রোবাসও রাখা আছে।

উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির চিকিত্সক আবদুল মবিন বলেন, ‘আমার চেম্বারে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুট করা হয়। কোনো কারণ ছাড়াই এগুলো করা হয়।’

লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তি দাবি করে বুধবার ভোরে জামায়াতের নেতারা ঝটিকা মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর ও কটূক্তি করেন। এই কারণে দলের কিছু উত্তেজিত নেতা–কর্মী বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটান। তবে কোনো লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।

জানতে চাইলে লাকসাম থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বুধবার লাকসামের কয়েকটি স্থানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ থানায় মামলা করতে আসেননি।
লাকসাম উপজেলা জামায়াতের আমির জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কোনো মামলা করিনি। পৌর আমিরের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেন।’

পৌর আমির জয়নাল পাটোয়ারীর মুঠোফোনে সন্ধ্যায় একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।