Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজশাহীর কাটাখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রংপুরের পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বড়মজিদপুরের ফুল মিয়াসহ পরিবারের ৫ জন নিহত হয়েছেন। ফুল মিয়ার বাড়ির সামনে এক স্বজনের আহাজারি। আজ শনিবার সকালে

শোকে মুহ্যমান পীরগঞ্জ, চলছে শেষবিদায়ের প্রস্তুতি

বাড়িঘর, আসবাব সবই পড়ে আছে, কিন্তু মানুষ নেই। প্রতিটি বাড়ির উঠান-ঘরগুলোতে মানুষের ভিড় আছে, কিন্তু বাড়ির বাসিন্দারা কেউ নেই। সেখানে আশপাশের মানুষ ও নিকটাত্মীয়রা এসে ভিড় করেছেন। সবার চোখেমুখে শোকের ছায়া। দূরের ও কাছের আত্মীয়রা এসে কাঁদছেন। কেউ বিলাপ করছেন। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এরই মধ্যে উপজেলায় মাইকযোগে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার কথা মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মরদেহ এলে জানাজা-দাফনের সময় জানিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রচার চলানো হচ্ছে। মাইকে এমন শোকবাণী শোনার পর উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ মর্মাহত।

Also Read: রাজশাহীতে বাস-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের পর আগুন, নিহত ১৭

রাজশাহীর কাটাখালী থানার সামনে গতকাল শুক্রবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে বাস, মাইক্রোবাস ও লেগুনার সংঘর্ষে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এতে চার পরিবারের ১৬ জন রয়েছেন। অন্যজন মাইক্রোবাসের চালক হানিফ উদ্দিন (২৮)। পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এরই মধ্যে উপজেলায় মাইকযোগে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার কথা মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মরদেহ এলে জানাজা-দাফনের সময় জানিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রচার চলানো হচ্ছে।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় মজিদপুরের বাসিন্দা নিহত ফুল মিয়া। তিনি পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে মোটর পার্টসের ব্যবসা করতেন। দুর্ঘটনায় ফুল মিয়া (৪০), তাঁর স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫), মেয়ে সাবিয়া (৪), মেয়ে সুমাইয়া (৮) ও ছেলে ফয়সাল (১৩) মাইক্রোবাসের আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। আজ শনিবার সকাল আটটায় সরেজমিন ফুল মিয়ার বাড়িতে দেখা যায়, অনেক মানুষের জটলা। সবার মুখে শোকের ছায়া। বাড়ির উঠানে একই সঙ্গে পাঁচটি কবর খোঁড়ার কাজ করছেন গ্রামবাসী। এরই মধ্যে দেখা যায়, নিহত ফুল মিয়ার এক স্বজন নারী ছুটে এসে বাড়ির উঠানজুড়ে বিলাপ করছেন। আর হাউমাউ করে কাঁদছেন।

Also Read: মুহূর্তেই শেষ চার দম্পতি ও তাঁদের সাত সন্তানের জীবন

নিহত ফুল মিয়ার ছোট ভাই সুজন মণ্ডল পাশের বাড়িতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘অনেক আগে বাবাকে হারিয়েছি। আজ ভাই, ভাবি ও সন্তানদের হারিয়ে যেন সবকিছুই হারালাম। শুক্রবার ভোরে ভাই-ভাবিসহ বাচ্চাদের দেখলাম বেড়াতে যেতে। বাচ্চাদের চোখেমুখে ঘুরতে যাওয়ার সে কি আনন্দ। রাজশাহী ঘুরে শুক্রবার রাতেই তাদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।’

রাজশাহীর কাটাখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রংপুরের পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বড়রাজারামপুর এলাকার সালাউদ্দিনসহ একই পরিবারের ৫ জন নিহত হয়েছেন। সালাউদ্দিনের শ্বশুরবাড়ির সামনে সালাউদ্দিন বাদে বাকি ৪ জনের জন্য কবর খোঁড়া হচ্ছে। আজ শনিবার সকালে

এদিকে এই গ্রামের পাশের গ্রাম বড় রাজারামপুরেও গিয়ে দেখা গেল শোকের একই রকম চিত্র। দুর্ঘটনায় এই গ্রামের সালাউদ্দিন (৪৪), তাঁর স্ত্রী সামসুন্নাহার (৩২), শ্যালিকা কামরুন্নাহার (২৫), ছেলে সাজিদ (৯), মেয়ে সাবাহ খাতুনসহ (৩) একই পরিবারের পাঁচজন মারা গেছেন। সালাউদ্দিন বসবাস করতেন শ্বশুরবাড়িতে। নিহত সালাউদ্দিনের শ্বশুরবাড়ির উঠানে একই সঙ্গে চারটি কবর খোঁড়া হচ্ছে। সালাউদ্দিন ছাড়া বাকি সবার দাফন হবে সালাউদ্দিনের শ্বশুরবাড়িতে। আর সালাউদ্দিনের দাফন হবে তাঁর নিজ বাড়ি উপজেলার রাঙ্গামাটি গ্রামে। বাড়ির উঠান এবং আশপাশের এলাকায় মানুষ জটলা করে বসে আছেন। সবার মন যেন বিষণ্ন। কোনো কিছু জানতে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর মিলছে অনেক পরে।

Also Read: রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহতের ঘটনায় বাসচালক গ্রেপ্তার

নিহত সালাউদ্দিনের চাচাতো ভাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বলেন, তাঁর ভাই পীরগঞ্জ বাজারে টিন, রড ও সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সফল এবং সবার প্রিয়। পুরো পরিবার নিয়ে তিনি যে এভাবে চিরতরে চলে যাবেন, যতবার মনে করছেন, বুকটা ধড়ফড় করে উঠছে। এভাবে কি মানুষের মৃত্যু হতে পারে?

পীরগঞ্জ পৌরসভার প্রজাপাড়ার নিহত তাজুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তাজুল ইসলাম (৪০), স্ত্রী মুক্তা বেগম (৩৫), ছেলে ইয়ামিনসহ (১৪) পরিবারের তিনজনই নিহত হয়েছেন। ওই বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও আশপাশের মানুষকে বসে থাকতে দেখা যায়। মরদেহ কখন আসবে, তা কেউই সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। তবে সরকারি কবরস্থানে তাঁদের দাফনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানালেন স্বজনেরা।

রাজশাহীর কাটাখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রংপুরের পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বড়মজিদপুরের ফুল মিয়ার বাড়ির সামনে কবর খোঁড়া হচ্ছে। আজ শনিবার সকালে

বাড়ির উঠানে বসে থাকা নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে ছুটে আসা তাজুলের বড় ভাই জিয়াউল হক বলেন, তাঁর ভাইয়ের এই বাড়িতে এখন বসবাসের কেউই রইল না। বাড়ির তিনজনই মারা গেল। ভাইয়ের আরেকটি ছেলে ছিল, সে ১০ বছর আগে পানিতে ডুবে মারা গেছে।

পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র বলেন, মাইক্রোবাসের চালকসহ চার পরিবারের ১৬ জন মিলে মোট ১৭ জন মারা যাওয়ার খবর জেনেছেন। এখান থেকে তাঁদের আত্মীয়স্বজন রাজশাহী গেছেন। কখন মরদেহগুলো আসবে, তা এখনো জানা যায়নি।