
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স মোকাবিলায় পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থা নেই। কিছু এলাকায় গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধক টিকা দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত উপজেলায় শতকরা ৮ দশমিক ২ ভাগ গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্সের টিকা দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু ও ১১ জন আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে খামারি ও কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া গত তিন সপ্তাহে উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে ১৩টি গরু মারা গেছে। যদিও কৃষকদের দাবি যে মৃত গরুর সংখ্যা শতাধিক।
স্থানীয় বাসিন্দা ও খামারিদের অভিযোগ, অ্যানথ্রাক্স নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম চালাতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীদের গ্রামাঞ্চলে দেখা যাচ্ছে না। তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে উঠোন বৈঠক, মাইকিং ও প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। লোকবলসংকটের কারণে গবাদিপশুর চিকিৎসা দিতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় মোট বাদিপশু আছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৬০৮টি। এর মধ্যে গরু ১ লাখ ৩৭ হাজার ও ছাগল ১ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৮টি। অ্যানথ্রাক্স পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলায় ২৮ হাজার ৯০০টি টিকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আজ পর্যন্ত ২৪ হাজার গবাদিপশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মোট গবাদিপশুর শতকরা ৮ দশমিক ২ ভাগ টিকা পেয়েছে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত একটি গরু জবাই করা হয়। এতে অংশ নেওয়া ১১ জনের শরীরে দুই দিন পর ফোসকা পড়ে এবং মাংসে পচন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। পরে তাঁরা সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। এ ছাড়া অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে গত শনিবার রাতে রোজিনা বেগম (৬৫) নামের এক নারী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অসুস্থ ছাগল জবাই করে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর এলাকায় অ্যানথ্রাক্স নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কিশামত সদর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গবাদিপশু নিয়ে খামারিরা আতঙ্কে আছেন। বাইরের লোক দেখলেই তাঁরা গবাদিপশুর চিকিৎসা চাইছেন। গ্রামের ছালাম মিয়া (৬৫) বলেন, তাঁদের গ্রামের মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স ছড়ালেও কোনো মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়নি। প্রশাসনের কোনো সরকারি কর্মকর্তা আসেনি। সতর্কতামূলক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
কিশামত সদর গ্রামের গনি মিয়া (৬০) বলেন, গরু-ছাগলকে অ্যানথ্রাক্স রোগের টিকা দিতে প্রতিটি পশুর জন্য ১০ টাকা নেওয়া হয়েছে। কারও কাছে বেশি নেওয়া হয়েছে। উপজেলার নবাবগঞ্জ গ্রামের জহুরুল ইসলাম (৪৭) বলেন, ‘গরু-ছাগল নিয়ে বড় বিপদের মধ্যে আছি। কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার আগে সরকারি উদ্যোগে টিকা দেওয়া হচ্ছে না। ঘটনার পর থেকে গ্রামে মাংস বিক্রি হচ্ছে না। গরু-ছাগল জবাই করা কমে গেছে।’
পশ্চিম রাজিবপুর গ্রামের কৃষক শাহজাদা মিয়া বলেন, ‘আমার দুটি গরুকে আগাম টিকা দেওয়ার জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীদের কয়েকবার অনুরোধ করেছি। টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো টিকা দেয়নি। গরু নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দে প্রথম আলোকে বলেন, লোকবলের অভাবে গবাদিপশুর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অসচেতনতার কারণে অনেকে আক্রান্ত গবাদিপশু জবাই করছেন। সচেতনতা বাড়াতে উঠান বৈঠক, মাইকিং ও প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। ঘটনার পর উপজেলার আক্রান্ত এলাকার ১৮টি গরুকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। চারটি গরুর নমুনা গাইবান্ধা আঞ্চলিক প্রাণী রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারে পাঠানো হয়। দুটির মধ্যে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া গরুটিকে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, টিকা দেওয়ার সময় স্বেচ্ছাসেবকদের পাঁচ টাকা করে নিতে বলা হয়েছে।