
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেছেন, ‘একটি ভাষা হারিয়ে গেলে উপলব্ধিটাই হারিয়ে যায়। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এই রাজোয়াড় ভাষাটা যেন হারিয়ে না যায়। আপনাদের জমি যাতে ফেরত পাওয়া যায়, সে জন্য কাজ করবেন। আপনারা লেখাপড়া করবেন, আপনাদের পাশে আমরা থাকব।’
‘তারুণ্যের উৎসব’ শিরোনামে দেশব্যাপী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনের ধারাবাহিকতায় রাজশাহীর গোদাগাড়ীর চৈতন্যপুর গ্রামে আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববার দুই দিনব্যাপী সমতল ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সম্প্রীতি সমারোহ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে রাজোয়াড় জাতিগোষ্ঠীর আলপনাচিত্র প্রদর্শন ও ১৩ জনগোষ্ঠীর নৃত্য-গীত ও নাটক অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানে দেখা যায়, রাজশাহীর গোগ্রাম বটতলা গ্রামের কাকলি মুন্ডা, লাবণী মুন্ডা, দীপিকা মুন্ডা, প্রীতি মুন্ডা, মৌমিতা মুন্ডা নেচে নেচে এগিয়ে যাচ্ছেন। আর তাদের সঙ্গে মাদল বাজিয়ে যাচ্ছেন অখিল টপপো, করতাল বাজাচ্ছেন নীলকান্ত মুরারি আর একদল নারী তাঁদের গায়ে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিচ্ছেন। নৃত্য–গানে অতিথিদের বরণ করে এভাবেই মঞ্চের কাছে নিয়ে আসেন তাঁরা।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সৈয়দ জামিল আহমেদ ছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়, অনগ্রসর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাজকুমার শাওন। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উপপরিচালক এস এম শামীম আকতার।
সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘এই বরেন্দ্রভূমিতে বাঙালির চেয়ে আপনারাই অনেক আগে থেকেই বসবাস শুরু করেছেন। এ জন্যই আপনাদের আগের বক্তা আদিবাসী বলেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যখন আপনাদের আদিবাসী বলে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, এটা একটা বড় কথা। এই ভূমিতে আপনাদের অধিকার সবার আগে। ৭১ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছি এই জন্যই যে আমরা আমাদের নিজেদের জাতিসত্তা ও ভাষা যেন নিজেরাই টিকে রাখতে পারি। তাহলে আমরা কেন অন্যের ভাষা কেড়ে নেব।’
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ‘সংস্কৃতি কেবল কীভাবে আমরা হাঁটি-খাই-কথা বলি সেটাই নয়। সংস্কৃতি হচ্ছে আমাদের নাচ–গান এবং ছবি আঁকাও। এর ভেতর থেকে জীবনকে যাপন করে দেখি জীবন কেন গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা মানুষকে তার জীবনের উপলব্ধি প্রকাশ করতে সাহায্য করে। একটা ভাষা হারিয়ে যাওয়া মানেই একটা উপলব্ধিও হারিয়ে যাওয়া।’ আর বাঙালিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাঙালিরা আপনারা অন্যদের শ্রদ্ধা করবেন। তা ছাড়া অন্য কোথাও গিয়ে আপনি অশ্রদ্ধার পাত্র হবেন।
জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, ‘একা একা ভালো থাকা যায় না। সবাই মিলে ভালো থাকতে হয়। এই যে আমরা ভালো আছি, এই ভালো থাকাটা ধরে রাখতে হবে।’
অনুষ্ঠানে রাজকুমার শাওন আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান। বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় বলেন, আদিবাসীদের প্রধান সমস্যা জমি। জমি তাঁদের বেহাত হয়ে যায়।
আলোচনা শেষে নৃত্য পরিবেশন করেন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও বান্দরবানের চাকমা মারমা, পাংখোয়া, ত্রিপুরা এবং সমতলের সাঁওতাল, ওঁরাও, পাহাড়িয়া, রাজোয়াড়, মুন্ডা, মাহাতো, ভূমিজ, গড়াৎ মাহালী শিল্পীরা।