কৃষিশ্রমিকের কাজ করে জিপিএ-৫ পেয়েছে শেরপুরের মাহমুদ হাসান

মাহমুদ হাসান
ছবি: সংগৃহীত

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারিয়েছিল মাহমুদ হাসান। তখন পরিবারের খরচ জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন মাহমুদের মা ও বড় ভাই। এমন অবস্থায় মাহমুদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হলে তার নিজেরও আয় করতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে কৃষিশ্রমিকের কাজ শুরু করেছিল মাহমুদ। পড়াশোনাও চলছিল সমানতালে। অবশেষে সব বাধা পেরিয়ে মাহমুদ চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।

মাহমুদ শেরপুরের সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের নলবাইদ গ্রামের মৃত ছানোয়ার হোসেনের ছেলে। সে সদর উপজেলার কামারেরচর পাবলিক হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

২০১৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় মাহমুদের বাবা ছানোয়ার হোসেন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দিনমজুর বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর পরিবারের আর্থিক সংকট আরও বেড়ে যায়। ওই সময় মাহমুদের পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। পরিবারের খরচ জোগাড় করতে মাহমুদের মা আজিয়া বেগম তখন গৃহকর্মীর কাজ নেন। আর মাহমুদের বড় ভাই রাজু আহমেদ একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে ঢাকায় চলে যান। কিন্তু মা আর বড় ভাইয়ের সামান্য আয়ে মাহমুদের পড়াশোনার খরচ দেওয়া তো দূরের কথা, সংসার চালানোই কঠিন ছিল।

তাই নবম শ্রেণিতে ওঠার পরপরই মাহমুদ অন্যের জমিতে কৃষিশ্রমিকের কাজ শুরু করে। ২০২০ সালে করোনাকালে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পুরো সময় তিনি খেতে কাজ করেছে। এ ছাড়া চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে ও শেষ হওয়ার পর পুরোদমে আমন খেতে কাজ করেছে মাহমুদ। এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হবে—এটাই যেন ব্রত হিসেবে নিয়েছিল সে। তাই সারাদিন খেত–খামারে কাজ করত, বাড়ি ফিরে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে সে পড়াশোনা করত।

মাহমুদের মা আজিয়া বেগম বলেন, তাঁর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এক মেয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী। মাহমুদ সবার ছোট। নলবাইদ গ্রামে বসতঘরের সাত শতাংশ জমি ছাড়া আর কোনো জমি নেই তাঁদের। বসবাসের জন্য যেই ঘরই আছে, সেটাও প্রায় জরাজীর্ণ। সবমিলিয়ে মাহমুদের পড়াশোনার খরচ দেওয়া মতো অর্থ তাঁদের ছিল না। তাই কৃষিশ্রমিকের কাজ করে মাহমুদ নিজেই নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করেছে।

মাহমুদ বলে, ‘আমাদের অভাবের সংসার। এখন আমি একটি ভালো কলেজে ভর্তি হতে চাই। কিন্তু কলেজে ভর্তির খরচ, পড়ালেখার খরচ—কীভাবে জোগাড় করব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আমার জীবনের লক্ষ্য বিমানের পাইলট হওয়ার। কিন্তু টাকার অভাবে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেলে আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে।’

অনুরণ এক্সক্লুসিভ স্কুলের পরিচালক সাদিকুন নাইম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাহমুদের মেধা সম্পর্কে আমরা জানতাম। অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও সে নিজে পরিশ্রম করে টাকাপয়সা উপার্জন করে পড়ালেখা করেছে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। মাহমুদ ভালো ফল করে আমাদের গর্বিত করেছে।’