
মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও কাজম আলী ভূঁইয়া (৭৫) লাঠিতে ভর দিয়ে এলাকায় ঘুরে এসেছিলেন। বাড়ি ফিরে তিনি মাটির ঘরের দরজার সামনে নাতি-নাতনির সঙ্গে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। শুক্রবার সকালে ভূমিকম্প শুরু হলে নাতি-নাতনিরা দ্রুত সরে যেতে পারলেও তিনি বয়সের কারণে পারেননি। হঠাৎ ওই মাটির ঘরের একটি দেয়াল ধসে পড়ে তাঁর ওপর।
নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় মাটির ঘরের ধসে পড়া দেয়ালের চাপায় নিহত কাজম আলী ভূঁইয়ার ছেলে সজল ভূঁইয়া ঘটনার এমন বর্ণনা দিচ্ছিলেন। নিহত কাজম আলী ভূঁইয়া উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
মালিতা গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, ভূমিকম্পের সময় বাড়িতে ছিলেন সজল ভূঁইয়া ও তাঁর ভাবি মাসুমা বেগম। বাড়িতে একাধিক টিনশেড ঘর ও একটি মাটির ঘর আছে। সাধারণত এ মাটির ঘরটিতে কেউ থাকেন না, সব সময় ফাঁকা থাকে।
নিহত ব্যক্তির ছেলে সজল ভূঁইয়া বলেন, বাবা মাটির ঘরটির দরজার ভেতরে বসে নাতি-নাতনিদের খেলা দেখছিলেন। ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে আতঙ্কিত নাতি-নাতনিরা দ্রুত সরে যেতে পারলেও বাবা পারেননি। তিনি উঠে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু বের হতে পারেননি। এ সময় ঘরের একটি দেয়াল ধসে তাঁর ওপরে পড়ে। এতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পান তিনি।
পরে তাঁর বাবা কাজম আলী ভূঁইয়াকে উদ্ধার করা হয়। তাঁকে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে নেওয়া পর জরুরি বিভাগের ফটকের সামনে দুপুর ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করলে তাঁরা লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
নিহত বৃদ্ধের বড় ছেলে মনির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও বাবা তাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন।
শুক্রবার বাদ মাগরিব নিজ বাড়ির মসজিদ মাঠে কাজম আলী ভূঁইয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন এলাকার ও আশপাশের শত শত মানুষ। পরে পাশের সামাজিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।