জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধ ও আশপাশের এলাকায় আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে আলম খারকান্দি এলাকায় একটি দ্বিতল মসজিদ, সাতটি বসতবাড়ি ও দুটি দোকান নদীতে বিলীন হয়ে যায়। মঙ্গলবার দুপুরে তোলা
জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধ ও আশপাশের এলাকায় আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে আলম খারকান্দি এলাকায় একটি দ্বিতল মসজিদ, সাতটি বসতবাড়ি ও দুটি দোকান নদীতে বিলীন হয়ে যায়। মঙ্গলবার দুপুরে তোলা

জাজিরায় আবার ভাঙন: দ্বিতল মসজিদ, বসতবাড়ি, দোকান ও সড়ক পদ্মায় বিলীন

শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধ এলাকার আশপাশে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে জাজিরা প্রান্তের আলম খারকান্দি এলাকায় অন্তত ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে গ্রামের একটি দ্বিতল মসজিদ, দুটি দোকান, সাতটি বসতবাড়িসহ মাঝিরঘাট-পালের চর সড়কের ৫০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

এ নিয়ে সপ্তম দফায় বাঁধের ৮০০ মিটারসহ এক কিলোমিটার এলাকা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল। গত দুই মাসে বাঁধের পাশে থাকা ৩৫টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫৭টি বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের পাশের তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার ও মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাতবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে আছে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরে পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। নাওডোবার ওপর দিয়েই পদ্মা সেতু পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মিত। এসব অবকাঠামো নির্মাণে ২০১২ সালে জমি অধিগ্রহণের সময় থেকে নাওডোবা এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষা করতে সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্বে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণে) আলাম খাঁর কান্দি, ওছিম উদ্দিন মাতবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি ও মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাতবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।

আজ সকালে বাঁধের পাশে থাকা আলম খারকান্দি গ্রামের দ্বিতল একটি মসজিদ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এ সময় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একই সময় ভাঙনে মসজিদের পাশে থাকা সাতটি বসতবাড়ি ও দুটি দোকান নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের পাশ দিয়ে ছিল মাঝিরঘাট-পালের চর সড়ক। ওই সড়কের ৫০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। খবর পেয়ে বালুভর্তি জিও টিউব ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন পাউবোর কর্মীরা।

নদীভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মঙ্গলবার দুপুরে জাজিজার আলমখার কান্দি এলাকায়

আলম খারকান্দি এলাকার বাসিন্দা আতাহার খান (৪৮) কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। নদীভাঙনে তাঁর আট বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। আজ সকালের ভাঙনে ১৭ শতাংশ জমিসহ তাঁর বসতবাড়িটি বিলীন হয়ে যায়। আতাহার খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামের মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবার ছিলাম। তিন দফা নদীভাঙনে ৮ বিঘা চাষের জমি পদ্মায় হারিয়েছি। এরপর পেশা পরিবর্তন করে জীবন যাপন করছিলাম। আজ নদীতে সব চলে গেছে। এখন বেঁচে থাকার আর কোনো অবলম্বন রইল না।’

আলম খারকান্দি এলাকায় একটি মুদিদোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন হারুন খান (৬০)। আজ সকালের ভাঙনে তাঁর দোকানটি নদীতে বিলীন হয়েছে। হারুন খান বলেন, বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় ছিল দোকানটি। সেটিও নদীগর্ভে চলে গেছে। সেই সঙ্গে বসতবাড়ির দুটি ঘর চলে গেছে। বাড়ির অন্য দুটি ঘর সরিয়ে নিয়েছি। এখন কোথায় আশ্রয় নেব, বলতে পারছেন না।

দুপুরে জাজিরার আলম খারকান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, থেমে থেমে নদীভাঙন চলছে। নদীর তীরের মাটি ভেঙে বিলীন হচ্ছে। আশপাশের মানুষ আতঙ্কে বাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙন ঠেকাতে পাউবোর কর্মীরা নদীতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছেন। বিভিন্ন বসতবাড়িতে থাকা বিভিন্ন ধরনের গাছপালা কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

পাউবোর শরীয়তপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে নদীতে স্রোত বেড়েছে। অতিরিক্ত স্রোত থাকায় জাজিরা এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাঁরা ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। ভাঙনকবলিত ৮০০ মিটার এলাকাজুড়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হচ্ছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, নদীভাঙনের শিকার মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। তাঁদের খাদ্য ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যাঁদের কোনো থাকার জায়গা নেই, তাঁদের সরকারের খাসজমিতে পুনর্বাসন করা হবে।