কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার অরণ্যপুরে গোমতীর চরের নিচু স্থানে নির্মাণ করা একটি রেস্তোরাঁর এ স্থাপনাগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। এরই মধ্যে পানি সরে যাওয়ায় সেগুলো ভেসে উঠেছে। আজ শনিবার সকালে
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার অরণ্যপুরে গোমতীর চরের নিচু স্থানে নির্মাণ করা একটি রেস্তোরাঁর এ স্থাপনাগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। এরই মধ্যে পানি সরে যাওয়ায় সেগুলো ভেসে উঠেছে। আজ শনিবার সকালে

স্বাভাবিক অবস্থায় গোমতীর পানি, আতঙ্ক কাটিয়ে ঘরে ফিরলেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সংরাইশ এলাকায় গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ সড়কে গত বৃহস্পতিবারের চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। নদীপাড়ের মানুষের চোখেমুখে ছিল উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। আতঙ্কগ্রস্ত চরের বাসিন্দারা নিজেদের সর্বস্ব রক্ষায় নদীর বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে বাঁশ গেড়ে পলিথিন বা ত্রিপল দিয়ে বানাতে থাকেন খুপরি ঘর। তবে আজ শনিবার সকালে একই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল অন্য রকম চিত্র।

ওই স্থানে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে নদীপাড়ের মানুষের বানানো পাঁচটি খুপরি দেখা যায়নি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার পর থেকে নদীর পানি আর বাড়েনি। টানা তিন দিন অব্যাহতভাবে কমছে নদীর পানি। বলা চলে, গোমতীর পানি অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।

আজ সকাল নয়টার দিকে সংরাইশ এলাকায় নদীর চরে গিয়ে কথা হয় সেখানে একটি টিনের ঘরে বসবাস করা সত্তরোর্ধ্ব নারী আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার এই বৃদ্ধার চোখেমুখেই দেখা গিয়েছিল আতঙ্কের ছাপ। বর্তমানে স্বস্তিতে আছেন জানিয়ে আনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুধবার রাইতে ঘুমাইতাম পারছি না। তয় বৃহস্পতিবার থাইক্যা পানি কমনে এহন একটু শান্তিতে আছি। বাঁশ আর পলিথিন দিয়ে গাঙ্গের পারো যেই ঘরডা বানাইছিলাম হেইডা শুক্রবার বিকেলে খুইল্যা লইয়া আইছি। আল্লাহয় আমরারে রক্ষা করছে। ভাবছিলাম, গত বছরের মতো এইবারও আমরার সব শেষ হইয়া যাইব। আল্লাহয় রক্ষা করনে এহন আর কোনো ডর নাই। পানি এহন আগের মতোই। যেইডা বাড়ছিল, হেইডা নাইম্যা গেছে।’

পাশের অরণ্যপুর এলাকায় গোমতী নদীর চরের নিচু জমিতে একটি রেস্তোরাঁর স্থাপনা বৃহস্পতিবার সকালে পানিতে তলিয়ে ছিল। আজ সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, পানি নেমে যাওয়ায় স্থাপনাগুলো ভেসে উঠেছে। পানি নেমে যাওয়ায় একই এলাকার চরের নিচু কৃষিজমিগুলো ভেসে উঠেছে। এতে সেখানকার মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা শামছুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের আতঙ্ক কেটে গেছে। কারণ, নদীর পানি বলা চলে স্বাভাবিক অবস্থায় চলে এসেছে। এ নদীতে জোয়ার-ভাটা নেই। অতীতে দেখেছি, উজানের ঢলের কারণেই নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যেত। আবার যখন পানি কমা শুরু করে, তখন কমতেই থাকে। যেভাবে দ্রুত গতিতে পানি বেড়েছিল, একইভাবে গত তিন দিনে পানি নেমে গেছে। এবারও নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও চরের নিচু কৃষিজমিগুলোর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা হয়নি সৃষ্টিকর্তার রহমতে।’

চরের নিচু জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়ের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চরের নিচু জমিগুলোর শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। তবে আমরা বড় ধরনের যেই ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করেছিলাম, সেটি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে পানি কমে যাওয়ায়। অতিবৃষ্টির কারণে জেলার ১৭টি উপজেলায় ১ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমির শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে চার-পাঁচটি উপজেলার গোমতী চরের নিচু জমিগুলোর কিছু শাকসবজিও আছে।’

আজ সরেজমিনে গোমতী নদীর কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার টিক্কারচর, জগন্নাথপুর, সংরাইশ, বানাসুয়া, অরণ্যপুরসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে বৃহস্পতিবার নির্মাণ করা অন্তত ২০টি খুপরির একটিও দেখা যায়নি। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে চরের অনেক বাসিন্দা ঘরের মালপত্র নদীর বেড়িবাঁধ সড়কে এনেছিলেন, সেগুলোও এরই মধ্যে ঘরে ফিরিয়ে নিয়েছেন সবাই। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক দেখা গিয়েছিল, গোমতী নিয়ে সেটি এরই মধ্যে কেটে গেছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি। পানির স্তর বিপৎসীমার নিচে থাকলেও উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা ছিল সবার মধ্যেই। যদিও দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। তবে এরই মধ্যে গোমতীর পানির স্তর স্বাভাবিক হয়ে আসছে, তাই শঙ্কার কোনো কারণ নেই। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও বন্যার সৃষ্টি হয়নি।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছৈয়দ আরিফুর রহমান বলেন, কুমিল্লায় বর্তমানে বৃষ্টির পরিমাণ শূন্য। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে কুমিল্লা জেলাও আছে।