
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চেইন অব কমান্ড’ ও ‘ভার্সিটির কালচার’ শেখানোর নামে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেটসংলগ্ন চিকনা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীও রয়েছেন।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টরিয়াল বডি ও বিভাগের শিক্ষকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথম বর্ষের ওই শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেন। পরে রাতে প্রক্টরের কাছে একটি অভিযোগ জমা দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় আজ বুধবার সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের কাছে পৃথক আরেকটি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর ওই বিভাগের ১৩ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। কেন তাঁদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার জবাব লিখিতভাবে বিভাগীয় প্রধানের কাছে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।
প্রথম বর্ষের ৩০ শিক্ষার্থী স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ, ১৮তম আবর্তন) শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বর্ষের (২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ, ১৭তম আবর্তন) শিক্ষার্থীরা ‘চেইন অব কমান্ড’ ও ‘ভার্সিটির কালচার’ শেখানোর নামে ‘অমানুষিক’ নির্যাতন করে থাকেন। ‘ম্যানার’ শেখানোর নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁদের আটকে রাখা হয়। কারও অসুস্থতা বা কোনো অসুবিধা বিবেচনা করা হয় না। প্রায় রাতে ছেলেদের বঙ্গবন্ধু হলের ৪১৬ ও ৮২৪ নম্বর কক্ষে ও জঙ্গলবাড়িতে নিয়ে হেনস্তা করে ফজরের সময় ছাড়া হয়। অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আমাদের ব্যাচের ৩২ শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে মানুষিক অত্যাচার করা হয়, যার ফলে সেখানে উপস্থিত দুজন মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ রকম মিটিংয়ের আগেও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।’
প্রক্টর মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে সিনিয়র ব্যাচ বসেছিল। খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে তাদের নিয়ে আসি। এ সময় সময় একজন শিক্ষার্থী কিছুটা অসুস্থ বোধ করেছিল, পরে সে ঠিক হয়ে যায়। পরে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা আমার দপ্তরে গতকাল অভিযোগ দিলেও সেটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আজ আবেদন করে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে তাদের শোকজ করা হয়েছে। আমার দপ্তর থেকেও শোকজ করা হবে।’
এদিকে আজ বিভাগীয় প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের সভা হয়। সভা শেষে দ্বিতীয় বর্ষের ১৩ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হচ্ছেন আশরাফ সিদ্দিকী, সারজিস হাসান, শায়েরি সিদ্দিকা, মো. মাসুম বিল্লাহ, মো. ইমরান হোসেন, নুসরাত জাহান, লিজা তালুকদার, ইফফাত মুশতারী, তামান্না আকতার, অর্পিতা রায়, মারুফ আহমেদ, রাইসা ইসলাম ও তাসমিয়া আনজুম।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার প্রক্টর অফিস থেকে ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আজ লিখিত অভিযোগ দেয়। এ ঘটনায় যেসব শিক্ষার্থীর নাম এসেছে, তাঁদের শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিনিয়র-জুনিয়র গ্রুমিংয়ের জন্য বসলেও সেখানে কিছু অ্যাকটিভিটি নরমাল ছিল না। যাঁরা কাজটি করেছে, তাঁরা ভুল বুঝতে পেরেছে মনে হয়। যাঁরা ভুক্তভোগী, তাঁদের দাবি ছিল, এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে এবং যাঁরা দোষী, তাঁদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এসব বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং না থাকুক এবং এ ধরনের ঘটনা না ঘটুক। বিষয়টি নিয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।’