
ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাক কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে (২৭) পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ সোমবার সকালে ময়মনসিংহ শহর ও তারাকান্দা উপজেলায় পৃথক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এসব কর্মসূচি থেকে দীপু হত্যায় জড়িত সব আসামিকে গ্রেপ্তারে সাত দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
আজ দুপুর ১২টার দিকে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সদস্যসচিব আল নূর মোহাম্মদ আয়াসের উদ্যোগে এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে আল নূর মোহাম্মদ আয়াস বলেন, ‘ভালুকায় গার্মেন্টস কর্মী দীপু দাসকে মিথ্যা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার পর তাঁর মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুন দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগও উঠেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়নি। উগ্রবাদীদের দ্বারা সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ড ও বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। এই পৈশাচিক হত্যা আমরা কোনোভাবেই মানতে পারি না। দীপুর পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
আল নূর মোহাম্মদ আয়াস আরও বলেন, ‘কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলা এখানে স্পষ্ট ছিল। তাঁদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা প্রশাসনকে সাত দিনের আলটিমেটাম দিচ্ছি—এর মধ্যে সব আসামিকে গ্রেপ্তার করতে হবে।’
এদিকে আজ বেলা ১১টার দিকে দীপু দাস হত্যার প্রতিবাদে তারাকান্দায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের তারাকান্দা উপজেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত কর্মসূচিতে নিহত ব্যক্তির স্বজনেরাও অংশ নেন।
কর্মসূচির ব্যানারে লেখা ছিল—‘গার্মেন্টস কর্মী দীপু দাসকে মিথ্যা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা।’
তারাকান্দা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল উপজেলার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে দীপু চন্দ্র দাসের গ্রামের বাড়ি বানিহালা ইউনিয়নের মোকামিয়াকান্দা গ্রামে যায়। বিক্ষোভে অংশ নেন দীপু চন্দ্র দাসের বাবা রবি চন্দ্র দাস, মা শেফালী চন্দ্র দাস ও স্ত্রী মেঘলা রানী দাস।
এ সময় রবি চন্দ্র দাস বলেন, ‘ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করছি। আমরা অসহায় পরিবার। আমার ছেলেটাকে এমনভাবে ওরা মারল। আমার পরিবারের তো ভরসার আর কোনো জায়গা রাখল না। ওর (দীপুর) দেড় বছর বয়সী সন্তানটার কী হবে? আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের ময়মনসিংহ উত্তর জেলা শাখার আহ্বায়ক সুব্রত পাল, সদস্যসচিব বিশ্বজিৎ ঘোষ, তারাকান্দা উপজেলা শাখার সভাপতি রতন ভৌমিক ও সদস্যসচিব কাঞ্চন শর্মা।